সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

হারিয়ে যাচ্ছে বটবৃক্ষ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে বটবৃক্ষ

বট শুধু বৃক্ষ নয়। এ হলো বৃক্ষরাজ, বনস্পতি, মহীরুহ। মোরাসি গোত্রের বিশালাকার উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ফাইকাস বেঙ্গালেনসিস। এক সময় বাংলাদেশের সব অঞ্চলে বটগাছ  দেখা যেত। বর্তমানে আর তেমন চোখে পড়ে না। বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সংস্পর্শে মিশে আছে এই বটবৃক্ষ। যার শাখা-প্রশাখা চারপাশ ছড়িয়ে ইকোলজিক্যাল সিস্টেম ধরে রাখে।

বর্তমানে বটগাছ আর তেমন চোখে পড়ে না। আমাদের পরিবারের জীবিত বয়স্ক ব্যক্তিকে বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির ধারে ও খেয়াঘাটগুলোতে বটগাছ থাকত। তখন কোনো ঠিকানা নিশ্চিত করতে বটগাছকেই ব্যবহার করা হতো। বটগাছ ছিল মানুষের মিলন মেলা। খেয়াঘাটে বটগাছের নিচে মানুষের জন্য তৈরি করা হতো বাঁশের মাচাং। যেখানে খেয়া পারাপারের আগে পথচারীরা অলস সময় কাটিয়ে খেয়া পার হতো। গ্রাম-গঞ্জের মেলাও বসতো বটবৃক্ষের নিচে। এমনকি কৃষি শ্রমিকরা এক সময় বিশ্রাম নিত এই বটবৃক্ষের তলায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় লিখেছেন, ‘লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা, ঘন পাতায় গহন ঘটা, হেতা-হোতায় রবির ছটা, পুকুর ধারে বট’। বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রবীণ ব্যক্তি নলিনী সরকার (৯০) মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, ছোট বেলা থেকে আমাদের এ অঞ্চলে অসংখ্য বটবৃক্ষ ছিল। পুরনো বটগাছগুলো মানুষ কেটে ফেললেও নতুন করে কোনো চারা রোপণ না করায় আর চোখে পড়ছে না প্রকৃতিবান্ধব এই বটগাছ। বিশাল আকৃতির এই বটগাছগুলোকে আমাদের প্রয়োজনে রক্ষা করতে হবে।

ঐতিহ্যের ধারক ও পরিবেশবান্ধব এই বটগাছ নিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতিবিদরা গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে বলেছেন, ‘যখন কোনো প্রজাতি ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ইকো সিস্টেম নষ্ট করে তখন ধরে নেওয়া যায় সে জায়গা থেকে বটগাছ নিধন হয়েছে। পাখি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বটগাছ নিধন হওয়া। বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম জানান, একটি বটগাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে ৩ শতাধিক প্রজাতির আবাস নষ্ট হয়। এরা আশ্রয়ের সন্ধান খুঁজে বেড়ায়। আশ্রয় না মিললে এক সময় হারিয়ে যায় বা বিলুপ্ত হয়। তিনি জানান, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে পরিবেশবান্ধব বৃহৎ আকৃতির এই বটবৃক্ষকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে একদিন প্রকৃতি থেকে এই বৃক্ষরাজ হারিয়ে যাবে। বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান জানান, আগের মতো আর বটগাছ চোখে পড়ে না। আমাদের প্রয়োজনেই বেশি বেশি বটগাছ লাগাতে হবে। এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বটগাছ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর