বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ

মিডিয়ায় যেভাবে প্রচার হচ্ছে সেভাবে বন্যা নেই : মন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ

ইসলামপুরে চেঙ্গানীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিভিন্নস্থানে নদ-নদীর পানি কমলেও অনেক স্থানে এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা পরিবারগুলোর কেউ কেউ বাড়ি ফিরলেও অধিকাংশ মানুষ বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সংকট। কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি কমেছে। তবে পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, স্কুলগুলো এখনো ব্যবহারের উপযোগী হয়নি। বানভাসি মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কমেনি তাদের দুর্ভোগ। পানি কমতে শুরু করলে অব্যাহত রয়েছে নদী ভাঙন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে কমলেও এখনো বিপদসীমার ২৮ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো বসতবাড়িতে পানি থাকায় কেউ ঘরে ফেরেনি। বিশুদ্ধ পানি সংকট ও টয়লেটের বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যা নিয়ে ওয়াপদার ধারে অবস্থান করছে। আর চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত পানির মধ্যেই জীবনযাপন করছে। সরকারি তথ্যানুযায়ী কয়েকদিনের বন্যায় জেলার ৫০টি ইউনিয়নের ২৪৭ গ্রাম ও ৫০ হাজার পরিবারের আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে আড়াই হাজার বসতভিটা সম্পন্ন ও ত্রিশ হাজার আংশিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙন কবলিতরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এ ছাড়াও ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং ৩৭৬টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে এখনো ত্রাণ পায়নি। আবার ত্রাণ বিতরণে অনিয়মই। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া জুড়ী ও বড়লেখা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে হাওর কাওয়াদীঘি তীরের রাজনগর ও সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগ লেগেই আছে দুর্গত মানুষের মাঝে। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা পরিবারগুলোর কেউ কেউ বাড়ি ফিরলেও অধিকাংশ মানুষ বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিকে ১ জুলাই থেকে হাওরাঞ্চলে ওএমএস বন্ধ করায় কষ্ট বেড়েছে মানুষের। তাদের দাবি দ্রুত ওএমএস চালু করার। অকাল বন্যায় ফসল হারানো হাওরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের মধ্যে মে মাস থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে ওএমএস চালু করা হয়েছিল এবং ৩০ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গত ১ জুলাই থেকে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। সরেজমিন হাকালুকি হাওর পাড়ে দেখা যায়, দুই-তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হাওর এলাকায় ধীরে ধীরে পানি কমছে। সরকারি হিসেবে কুলাউড়া, জুড়ীর বড়লেখা, রাজনগর ও সদর উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ দুর্গত মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। এ ছাড়া বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রম বন্ধ আছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, মৌলভীবাজারে বন্যার পূর্বে সাধারণ মানুষের মধ্যে মূলত কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অকাল ও কয়েক দফা বন্যায় নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। নামে মাত্র কিছু ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হলেও অনেকে ত্রাণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি ধীর গতিতে কমছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা সেতু পয়েন্টে ২৫ দশমিক ৪৭ সেন্টমিটার, তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৩৬, ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৬ দশমিক ৮০ ও ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ২৩ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। এবারের বন্যায় ৪৪ হাজার চাষি আংশিক ক্ষতির মুখে পড়ে। পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, স্কুলগুলো এখনো ব্যবহারের উপযোগী হয়নি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মো. জাফর আলী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, উপজেলা চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ হাসান লোবান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাগর, সাধারণ সম্পাদক শাকিব প্রমুখ। নীলফামারী : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, আগামী এক থেকে দেড় মাস বন্যার্ত মানুষের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে সরকার।  লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমতে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি কমতে শুরু করলে কমেনি ভাঙন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়েছে এ দুটি নদীর ভাঙন। গত সাত দিনে তিস্তা ধরলার ভাঙনে নতুন করে কয়েকশ ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিত মানুষ সরকারের কাছে আর ত্রাণ চান না। তারা চান স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হউক। গতকাল দুপুরে লালমনিরহাটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাঙন কবলিত লোকদের আশ্বস্ত করে বলেন, আর অপেক্ষা করতে হবে না, শিগগিরই বাঁধের ব্যবস্থা করা হবে। ত্রাণ নিয়ে কেউ রাজনীতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

মিডিয়ায় যেভাবে প্রচার হচ্ছে সেভাবে বন্যা হয়নি : পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, মিডিয়ায় যেভাবে প্রচার হচ্ছে সেভাবে বন্যা হয়নি। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনকালে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, নদী ভাঙনের কারণে এখন আর কোনো মানুষকে গৃহহারা হতে হবে না। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হবে। ভোলার ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভাঙন রোধে ভোলায় প্রায় ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম নদী মেঘনা, এ নদীর ভাঙন প্রবণতা বেশি। আমরা এ নদী শাসনের লক্ষ্যে কাজ করছি। কারণ বর্তমান সরকারের সামর্থ্য রয়েছে। এ দেশ এখন আর গরিব দেশ হিসেবে পরিচিত নয়। ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাওয়ার্দী মাস্টারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম বীরবিক্রম, পাউবোর মহা-পরিচালক মাহফুজুর রহমান, বরিশাল পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মো. সাজিদুর রহমান সর্দার, চিফ মনিটরিং কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল হোসেন, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন) মোতাহার হোসেন, ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। এরপর দুপুরে পানিসম্পদ মন্ত্রী ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলকে সঙ্গে নিয়ে দৌলতখান উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেন।

দৌলতখানের চৌকিঘাটায় অনুষ্ঠিত এক সভায় মন্ত্রী বলেন, জাতি আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হতে শিখেছে।

জ্বালাও পোড়াও আর হরতালের রাজনীতিতে এখন আর জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। শেখ হাসিনা উন্নয়নের রাজনীতি প্রবর্তন করে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন। আগামীতেও শেখ হাসিনার হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পিত হলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হবে। পরে বিকালে মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সুধী মহলের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর