বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘দোয়া চাই’ পোস্টারে ছেয়ে গেছে রংপুর সিটি

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

‘দোয়া চাই’ পোস্টারে ছেয়ে গেছে রংপুর সিটি

চলতি বছরের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই নির্বাচন ঘিরে আগাম প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। তারা বাড়ি বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঘুরছেন। ‘নগরবাসীর দোয়া চাই’ লেখা রঙিন পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সিটির পুরোটাই। কেউ প্রচারপত্র বিলি করছেন। এদিকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) নির্বাচন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসি। এ লক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভা হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আজকের কমিশন বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় ডিসেম্বরের শেষ দিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রংপুর ছাড়াও আগামী বছর আরও পাঁচ সিটি (রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর) করপোরেশন নির্বাচন করতে হবে। আগের মতো এবারও চার সিটিতে (রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট) একই সঙ্গে নির্বাচন করতে চায় ইসি। আর আলাদাভাবে হতে পারে গাজীপুর সিটিতে ভোট।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মেয়র পদে একজনের নাম ঘোষণা করলেও মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনজন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কারও নাম ঘোষণা না করলেও গণসংযোগে রয়েছেন একাধিক নেতা। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এবার দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হবে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন— এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই চার সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। এর মধ্যে বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পোস্টার ছাপিয়ে নগরবাসীর রূপকার দাবি করে বলেছেন, সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে সুন্দর পরিবেশবান্ধব সিটি উপহার দেবেন। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষে রয়েছেন ঝন্টু। মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করছেন সাফিউর রহমান সফিও। এ ছাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক আমলা ড. জয়নুল আবেদীনও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, তিনি সিটির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অশাবাদী, দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন দিলে জনগণের ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকা উপহার দেব। সে প্রস্তুতি নিয়েই গণসংযোগ চালাচ্ছি।’

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, ‘আগের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। এবারও মনোনয়ন পাব। এবার একটু আগাম প্রচারণা শুরু করেছি’। গত নির্বাচনে ৪ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়ে জামানত খুইয়েছিলেন সফি। আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছি। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মূল নগরের বাইরের এলাকায় একাধিক মেডিকেল পয়েন্ট স্থাপন এবং তরুণদের কর্মসংস্থানে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণসহ নয়টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছি।’ প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর জামান বাবুও। জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে রংপুরের এক সমাবেশে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে এরশাদ নিজেও কয়েকটি কর্মিসভায় প্রার্থী হিসেবে মোস্তফাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। গত নির্বাচনে সাড়ে ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর কাছে পরাজিত হন মোস্তফা। এদিকে দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারই ভাতিজা দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছি। আমার প্রতি অনেক অন্যায় করা হয়েছে। তাই নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছি।’ এদিকে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুর রউফ মানিকও। তিনি জাতীয় পার্টি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করব বলেই আপাতত নাগরিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ হয়ে প্রচারণা শুরু করেছি। শেষ পর্যন্ত কোন প্রতীকে নির্বাচন করব তা এখনো বলার সময় আসেনি।’ বিএনপির মহানগর সহসভাপতি কাওছার জামান বাবলা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে বলেছেন, ‘এর আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করেছি। এবারও করব বলে গণসংযোগ শুরু করেছি। আশা করি দলীয মনোনয়ন পাব।’ মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেনও প্রচারণার মাঠে। তিনি বলেন, ‘রংপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করেছি। মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।’ মনোনয়ন দৌড়ে আছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজুও। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৬৬ হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি।’ এ ছাড়া মেয়র পদে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সদস্য কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, জেলা বাসদের সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুসও মেয়র পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও গত নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে জামানত খুইয়েছিলেন। মেয়র পদে আরও প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবুও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর