বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ডাকসু সংগ্রহশালা

ঢাবির মিনি জাদুঘর

ফরহাদ উদ্দীন

ঢাবির মিনি জাদুঘর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) কার্যকর নেই দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু ডাকসুর সব স্মৃতিচিহ্ন ও এ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত রয়েছে ডাকসু সংগ্রহশালায়। এটি ‘গোপালের সংগ্রহশালা’ হিসেবেও পরিচিত।

১৮৮৩ সাল থেকে এ দেশের মুদ্রা, দুর্লভ আলোকচিত্র, পুস্তক, কোলাজ পদ্ধতির পোস্টার, পত্রিকা কাটিং, ভাষাশহীদ, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহূত জিনিসপত্র ইতিহাসের ইত্যাদি উপাদান সংরক্ষিত আছে এখানে। তাই একে অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মিনি জাদুঘর’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক দর্শনার্থী আসেন এখানে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। দেশের বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্মারক দেখতে ছুটে আসেন এখানে। অনেক শিক্ষার্থী আসেন গবেষণার উপাদান পেতে। ১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারি ডাকসু ভবনের নিচতলায় ছোট্ট একটি কক্ষে যাত্রা করে এ সংগ্রহশালা। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা এর উদ্বোধন করেন। ডাকসু সংগ্রহশালায় প্রবেশের আগে চোখে পড়ে ভবনের দেয়ালে আঁকা ভাষাশহীদদের ম্যুরাল ‘চেতনায় একুশে’। ভিতরে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন সময়ের ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ, শহীদ, শিক্ষাবিদ, দার্শনিকদের ছবি দৃষ্টি কেড়ে নেয়। সংগ্রহশালার এক কোনায় রয়েছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আমতলার সেই আম গাছের ধ্বংসাবশেষ। কাচের তৈরি একটি বক্সে রাখা হয়েছে এটি। কক্ষের ভিতরে চোখ বোলালেই দেখা মেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। দেয়ালের সব জায়গায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন তথ্যসংবলিত আলোকচিত্র। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ৩৫ জন ভাষাসৈনিকের মুদ্রিত সাক্ষাৎকার, ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক ২৯টি পোস্টার, ভাষাসৈনিকদের ১৫টি আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসংবলিত ছবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তের আলোকচিত্র, ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ আবুল কাশেম ও খালেক নওয়াজ খানের ব্যবহূত জিনিসপত্র, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, প্রচারপত্র, স্মারকলিপি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে পুুরো সংগ্রহশালা যেন দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অপরূপ সমন্বয়ের বহিঃপ্রকাশ। শুরু থেকেই যে মানুষটির অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিরন্তর প্রচেষ্টায় ডাকসু সংগ্রহশালা আজ এত সমৃদ্ধ তিনি হলেন মুক্তিযোদ্ধা গোপাল দাস। তিনি ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে নোয়াখালীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুরে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেষ বয়সে এসেও ক্যামেরা কাঁধে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিংয়ের ছবি তুলে সযত্নে সংরক্ষণ করেন সংগ্রহশালায়। তার চিন্তা-চেতনায় যেন এ দেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার স্পৃহা। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে একটি মহল অপচেষ্টা চালায়, তখন ডাকসু সংগ্রহশালা শিক্ষার্থীদের সঠিক ইতিহাসের দিশা দিয়েছে। তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত হতে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর