বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজশাহী সিটিতে আগাম প্রচারণা শুরু, মাঠে লিটন-বুলবুল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী সিটিতে আগাম প্রচারণা শুরু, মাঠে লিটন-বুলবুল

আগামী বছরের মাঝামাঝি রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে দলীয় প্রধান তাকে প্রস্তুতি নিতে বলায় তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন।

মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সামনের নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। তিনি মাঠের প্রচারণার পাশাপাশি ব্যস্ত ঘর গোছাতে। নগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে দলের একটি বড় অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সঙ্গে তার শীতল সম্পর্ক। ফলে বুলবুলকে এখন দলের ভিতরে-বাইরে লড়াই করতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা মেয়র প্রার্থী হিসেবে লিটনকে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন। লিটন জানান, দলীয় প্রধান তাকে প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামতে বলেছেন। তাই তিনি মাঠের কাজ শুরু করেছেন। দলের প্রধান তাকে যেভাবে বলবেন, তিনি সেভাবে কাজ করতে চান। এক প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, দলের কর্মীরা তাদের অতীতের ভুল বুঝতে পেরেছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবেই সবাই তার পক্ষে মাঠে নামবেন। ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে তার শীতল সম্পর্কের বিষয়টিও একটি পক্ষের প্রচারণা বলে জানান তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা জানান, গত নির্বাচনে লিটনকে বিজয়ী না করে নগরীর মানুষ যে ভুল করেছেন, এখন তারা তা বুঝতে পারছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ থাকাটা জরুরি। নইলে স্বাধীনতাবিরোধীরা সুযোগ নেবে। আগামী নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে মেয়র নির্বাচনটিকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাঠে থাকবে ১৪ দল। তবে লিটনের জন্য অপেক্ষা করছে চ্যালেঞ্জ। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলের একটি অংশ তার পক্ষে মাঠে নামেনি। নাগরিক কমিটির সিনিয়র সদস্যরাও ছিলেন নিষ্ক্রিয়। দুই অংশকে সক্রিয় করা হবে লিটনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র হন লিটনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নিজাম উল আযীম। নিজামের সময় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোতে ক্ষোভ বাড়ে নাগরিকদের মাঝে। প্রচারণা আছে— এসব সিদ্ধান্ত লিটনের পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে সেই সংকট কাটাতেও মাঠে কাজ করতে হবে লিটনকে। প্রায় দুই বছর নগর ভবনের বাইরে থাকা নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দলের প্রার্থী হচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে মিনুকে সরিয়ে দলের সভাপতি হওয়ার পর থেকে অনেকটা বেকায়দায় আছেন বুলবুল। মিনু সমর্থকরা বুলবুলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগও করেছেন সিনিয়র একাধিক নেতা। বুলবুলকে সভাপতির দায়িত্বে নিয়ে আসার নেপথ্যে যারা কাজ করেছেন, এমন সিনিয়র নেতাদের এখন অবজ্ঞা করে চলেছেন বুলবুল। ফলে আগামী নির্বাচনে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার পর কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পড়েছেন। বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বুলবুলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মচারীরা। এ ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তিনি তা বাস্তবায়ন করেননি। এ নিয়ে সুশীলসমাজের একটি বড় অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। লিটনের সময় নেওয়া কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে জনতার মুখোমুখি হতে হবে বুলবুলকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু জানান, দল থেকে যাকে প্রার্থী করা হবে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা তার পক্ষেই মাঠে থাকবেন। বুলবুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক আগের মতোই আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রধান যেভাবে বলবেন, আমরা সবাই সেভাবেই চলব। আগামী সিটি নির্বাচনে মানুষ এ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের রায় দেবে।’ মেয়র হিসেবে নিজে দলের মনোনয়ন চাইবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হ্যাঁ বা না বলেননি। নগর বিএনপি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, নির্বাচিত হওয়ার পরও তাকে যে কাজ করতে দেওয়া হয়নি, তা নগরীর মানুষ জানেন। এ ছাড়া দলের ভিতরে আগে তার বিরুদ্ধে কিছু নেতা ছিলেন। কিন্তু এখন বিএনপির সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর মাঠে সেটি দেখা যাবে। মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান জাতীয় পার্টির নগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু, ইসলামী আন্দোলনের আবুল কালাম আজাদ বাবু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবারও তিনি প্রার্থী হতে চান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর