বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, বন্ধ এক হাজার প্রতিষ্ঠান

আকতারুজ্জামান

মৌসুমি বন্যা ও উজান থেকে ঢল নেমে আসায় অনেক জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির তোড়ে স্কুল ভবন ও মেঝে ধসে গেছে। নদীসংলগ্ন এলাকার অধিকাংশ স্কুলের মাঠে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। এসব স্কুলে বিরাজ করছে পাঠদানের বৈরী পরিবেশ। তথ্যমতে, সারা দেশের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ আছে।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার গাছবাড়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার সে াতে ভেসে গেছে।  দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পাঠানো প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সারা দেশে সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতির পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ঢাকা থেকে সারাদেশের জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বন্যার কারণে দেশের কয়েক জেলার স্কুল-প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছে তথ্য চেয়েছি। বন্যার কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেসব জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পেলেই অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা পদক্ষেপ নেব। পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান নাহিদ। জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট জেলার ৩১টি ও মৌলভীবাজার জেলার ২৭টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান  বন্ধ রয়েছে। তবে মৌলভীবাজার জেলার আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি জমলেও সম্প্রতি পানি নেমে যাওয়ায় কিছু প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানাতে পারেনি জেলা শিক্ষা অফিস। আর ২৯টি স্কুলে খোলা হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানায়, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তলিয়ে গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখায় ৬০টি, কুলাউড়ায় ৪৪টি, জুড়ীতে ২০টি, রাজনগরে ২৪টি ও সদর উপজেলায় চারটি স্কুলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জামালপুর জেলার ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। জেলার মেলান্দহে ৯টি, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২০টি, ইসলামপুরে ৩২টি ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার কারণে যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। এসব স্কুলে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলা সদরের দুটি স্কুলেও শিক্ষাদান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুর জেলার প্রায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইলে চাকদহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার টিনের বেড়া ও চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে প্রতিষ্ঠানটির রুম ধসে গেছে। আনুমানিক এক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। এ ছাড়া জেলার আরও প্রায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার কারণে শিক্ষাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনা এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জেলা শিক্ষা অফিসার সূত্র জানিয়েছে, এসব অঞ্চলে কোনো স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসায় শিক্ষাদান কর্মসূচি বন্ধ হয়নি। 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, জেলার সোনাতলায় ১৭টি, সারিয়াকান্দিতে ৬৮টি ও ধুনট উপজেলার ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মোট ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করলেও কবে নাগাদ ক্লাস-পরীক্ষা চালু হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, রংপুর অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, গঙ্গাচড়ার সাউদপাড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় যাতায়াতের রাস্তা বন্যার কারণে ধসে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে একাডেমিক সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গাইবান্ধা সদরে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাসহ পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। সাঘাটায় একটি, ফুলছড়িতে ছয়টি, সুন্দরগঞ্জে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব স্কুলে শিক্ষাদান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত আছে। কুড়িগ্রামে ১০টিরও বেশি মাধ্যমিক স্কুলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব স্কুলেও ক্লাস-পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। রৌমারী উপজেলার গাছবাড়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যার সে াতে ভেসে গেছে। জেলার ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে পাঠদানে সাময়িকভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১১টি, চিলমারীতে ১৯টি, রৌমারীতে ১৫টি, রাজিবপুরে ৮টি, উলিপুরে ১১টি ও ভুরুঙ্গামারীতে তিনটি স্কুলে পানি উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র এসব তথ্য জানায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর