বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সাপ নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

মর্তুজা নুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

ব্যাঙ, ইঁদুর, ছুঁচো, পাখি, বাদুড়, গিরগিটি ইত্যাদি খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে সাপ। এদের খাদ্যাভ্যাস উপকৃত করছে কৃষিকে, ভারসাম্য রক্ষা করছে আমাদের প্রকৃতির। অথচ মানুষ না বুঝে প্রকৃতির এমন উপকারী প্রাণীকে অবাধে মেরে ফেলছে। রাজশাহী অঞ্চলে গত ১৬ দিনে নিধন করা হয়েছে ২৯৩টি গোখরা সাপ। এ সময় ১৮৮টি সাপের ডিমও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এভাবে একের পর এক সাপ নিধনের ফলে একদিকে যেমন ফসলি জমিতে বেড়ে যাবে ইঁদুরের উৎপাত, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য পড়ছে হুমকির মুখে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অবহেলাকে দায়ী করছেন প্রকৃতি গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, ‘প্রতি বছর বীজতলা থেকে শুরু করে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত ইঁদুরে বিনষ্ট করে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৩০ শতাংশ। তা ছাড়া ইঁদুর নিধনে যেসব বিষ প্রয়োগ করা হয় সে বিষের প্রভাবে অন্যান্য প্রাণীও আক্রান্ত হয়। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ বিষ খাদ্যবস্তুর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগের প্রভাব বিস্তার করে; যা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আমাদের। একটি সাপ প্রায় ৩ একর ফসলি জমির ইঁদুর নিধন করতে সক্ষম। তাই কীটনাশক ও বিষ প্রয়োগ থেকে সরে এসে যদি পরিবেশবান্ধব সাপ সংরক্ষণ করি তাহলে অনেক উপকৃত হব। এতে প্রতি বছর ইঁদুর দমন অভিযানের মাধ্যমে অর্থব্যয়ও কমে যাবে।’ ইঁদুরের কবল থেকে এ দেশকে মুক্ত করতে চাইলে সাপ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রকৃতি থেকে সাপের বংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও সাপের উপকারী দিক তুলে ধরে চাষিদের সচেতন করতে পারেন। বাড়ির ভিতর থেকে যে সাপগুলোকে উদ্ধার করা হচ্ছে, সেগুলোকে আশপাশের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন এই গবেষকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে গত ১৬ দিনে নিধন করা হয়েছে ২৯৩টি গোখরা সাপ। এ সময় ১৮৮টি সাপের ডিম ভেঙে নষ্ট করা হয়েছে। রাজশাহীর তানোর, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে সাপগুলো মারা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘এভাবে পাওয়ামাত্রই সাপগুলো মেরে ফেলা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সাপ ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। এভাবে সাপ মেরে ফেললে প্রকৃতির মাঝে আমাদের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়বে। আর এভাবে সাপ মারতে গেলে সাপের ছোবল খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ সাপগুলো নিজেরা না মেরে সাপুড়েদের মাধ্যমে বা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর