শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালের সাক্ষী গুরুদুয়ারা

ফরহাদ উদ্দীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালের সাক্ষী গুরুদুয়ারা

বাংলাদেশে বসবাসকারী অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে শিখ হচ্ছে একটি। শিখদের প্রধান উপাসনালয়কে বলা হয় ‘গুরুদুয়ারা নানক শাহী’। বাংলাদেশে শিখ ধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান উপাসনালয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। কলাভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পথচারীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যটি। ইতিহাসবিদদের ধারণা, এটি ১৬০৬-১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। এ সময় উপমহাদেশের শাসনভারের দায়িত্বে ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনি তখন পূর্ববাংলা শাসনভারের দায়িত্ব দেন ষষ্ঠ শিখগুরু হরগোবিন্দ সিংকে। তার প্রচেষ্টায় এ উপাসনালয়টি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন গুরুদুয়ারা পরিত্যক্ত থাকার পর ১৮৩৩ সালের দিকে এটি সংস্কার করা হয়। ১৮৪৭ সালের পর থেকে এটি পুনরায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটিকে সংস্কার করে নতুন রূপদান করা হয়। গুরুদুয়ারা পূর্বমুখী বর্গাকার ড্রামের ওপর স্থাপিত গম্বুজবিশিষ্ট। উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বদিকের দেয়ালে পাঁচটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। উপাসনালয়টির ভিতরে কেন্দ্রীয় কক্ষের চারদিকে রয়েছে পাঁচ ফুট প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দার প্রতিটি কোণায় রয়েছে একটি করে মোট চারটি কক্ষ। বারান্দার পরে তিনটি করে খিলান বিশিষ্ট প্রবেশ পথ রয়েছে। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর কার্তিকী পূর্ণিমায় পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণকারী শ্রী গুরু নানক দেব জী-কে শিখদের প্রধান ধর্মজাযক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো এ সম্প্রদায়েরও কিছু আলাদা বিশেষত্ব আছে। সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, বিশ্বাসের দিক থেকে এ সম্প্রদায়ের লোকজন খানিকটা আলাদা। এ সম্প্রদায়ের উপাসনা অনেকটা সংগীতসংশ্লিষ্ট। প্রার্থনার সময় ধর্মগ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি নানা বাদ্যযন্ত্র বাজান, যা অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে অনেকটা আলাদা। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার প্রার্থনা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন ধর্মের লোকজনও এতে যোগ দেন। গুরুদুয়ারার প্রার্থনাস্থলকে বলা হয় ‘দরবার সাহেব’। নারী-পুরুষ একসঙ্গে এ দরবার সাহেবে প্রার্থনায় অংশ নেয়। গুরুদুয়ারায় হলুদ রঙ্গের পতাকা টাঙানো থাকে। একে বলে ‘নিশান সাহেব’। নিশানের দুই দিকে তলোয়ারের আঁকা ছবি যা ‘খাণ্ডা’ নামে পরিচিত। এই নিশানকে শিখদের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক মিশ্রণের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। গুরুদুয়ারার কেন্দ্রীয় কক্ষের একটি বেদির ওপর রাখা থাকে শিখদের হস্তলিখিত ধর্মগ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহেব’। এ গ্রন্থকে ঘিরেই উপাসনা চলে। গুরুদুয়ারায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পবিত্র এ গ্রন্থসাহেব পাঠ করা হয়। এদের ধর্মাচারকে ‘আরদাস’ বলা হয়। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাপ্তাহিক জমায়েত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান পুরোহিত গ্রন্থটি পাঠ করে শোনান এবং কীর্তন করেন। প্রার্থনা শেষে ভোজন বা প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এখানে রয়েছে একটি ভোজনালয়। একে ‘গুরুকা লঙ্গর’ বলা হয়। গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে শিখ সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচশ লোকের বসবাস। এদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বাস করে। অনেকে ভারতীয় হাইকমিশনে চাকরি করেন, অনেকে আবার প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন। নিরাপত্তার কারণে বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপন করেন। পুরান ঢাকায় তাদের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। গুরুদুয়ারা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ রবি দাস পাপ্পু বলেন, প্রতি শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রার্থনায় যোগ দিতে শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে আসে। এ ছাড়া এদিন ভোজনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও অংশ নেয়। ফলে এটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। এতে করে সবার মধ্যে সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর