শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ারে রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ারে রাজশাহী

রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিলিকন সিটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে এ সিটি চালু হবে। এতে করে প্রযুক্তিনির্ভর বিপুল সংখ্যক তারুণ্যের জন্য মিলবে স্বপ্নের নতুন ঠিকানা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষানগরী রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে নির্মাণাধীন এ সিলিকন সিটি। এ নিয়ে এখন থেকেই স্বপ্ন দেখছেন তরুণ সমাজ। কারণ শুধু এ সিলিকন সিটির মাধ্যমেই খুলে যাবে উন্নয়নের বিশাল দিগন্ত। খোঁজ নিতে গিয়ে ধারণা পাওয়া গেছে, সিলিকন সিটির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন স্বপ্ন দানা বাঁধতে থাকে তরুণদের মধ্যে। এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আখেরুজ্জামানের অভিমত, ‘রাজশাহীতে সিলিকন সিটি চালু হলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য আর দৌড়াতে হবে না। এটি আমাদের জন্য সুখবর, রাজশাহীর জন্য সুখবর। দেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত এটি।’ রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা করিম বলেন, ‘সিলিকন সিটি আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। রাজশাহীতে এভাবে আরও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে এ অঞ্চলে বেকার সমস্যা বলে কিছু থাকবে না।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল ওয়াদুদ জানান, সিলিকন সিটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হবে। বিপুল সংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। বাড়বে এ খাতে কর্মসংস্থান। ফলে কর্মের জন্য রাজধানীমুখী মানুষের সংখ্যাও কমে আসবে। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান বলেন, ‘সিলিকন সিটি রাজশাহীর জন্য অনেক বড় স্বপ্ন। এটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগে বদলে যাবে রাজশাহীর চেহারা। তারুণ্যে আসবে প্রাণ। সেইসঙ্গে সহজে মিলবে কর্মসংস্থানের অপার সুযোগ।’ তিনি উল্লেখ করেন, এ সিলিকন সিটির মাধ্যমে রাজশাহীতো বটেই, বাংলাদেশকে নতুন করে চিনবে পুরো বিশ্ব। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সিলিকন সিটির নির্মাণের মধ্যদিয়ে আমাদের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। এ সিলিকন সিটির কাজ শেষ হলে ১৪ হাজার তরুণের কর্মসংস্থান হবে, যা রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে।’ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সিলিকন সিটি রাজশাহীর স্বপ্ন। এটি এখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় এ স্বপ্ন এখন রাজশাহীর দুয়ারে কড়া নাড়ছে।’ লিটন আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে এ সিলিকন সিটি নির্মিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীতে। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো এবং সান হোসে শহরের মাঝামাঝিতে ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা সিলিকন ভ্যালি ইন্টারনেট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ  হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেটির আদলে গড়ে উঠতে যাওয়া রাজশাহীর এ সিলিকন সিটিতেও তৈরি হবে বিশ্বমানের প্রযুক্তি পণ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলিকন সিটির নির্মাণ কাজের প্রাথমিক পর্ব চলছে এখন। গেট ও সীমানা প্রাচীরের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচনের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির অবকাঠামো নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর আগে রাজশাহী নগরীর নবীনগর মৌজায় হড়গ্রাম বাজারের পাশে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘হাইটেক পার্কের নির্মাণ শেষে এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ রাজশাহীকে সারা বিশ্বই চিনবে এই হাইটেক পার্কের মধ্য দিয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের ব্যাঙ্গালুরু, আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো ও ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন সিটির মতো বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি হবে।’ ‘২০২১ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে’ উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ‘বিওবির অর্থায়নে সিলিকন সিটিতে ১০তলা বিশিষ্ট একটি এমটিবি ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও ৬২ হাজার বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি আইটি ইনকুবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে, যা রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে। সিলিকন সিটিতে প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান-দুটোই দেওয়া হবে। প্রথমে প্রশিক্ষণ ও পরে কাজ দেওয়া হবে আগ্রহীদের।’ উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীর এক জনসভায় সিলিকন সিটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৩২ একর জমির ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর