শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

নওগাঁয় প্যাশন ফল চাষে সম্ভাবনা

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় প্যাশন ফল চাষে সম্ভাবনা

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় প্যাশন ফল চাষে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই ফল থেকে ট্যাংয়ের মতো শরবত তৈরি হয় বলে দেশে এটি ট্যাং ফল নামেও পরিচিত। পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রামে এগ্রোফার্মের পরিচালক সোহেল রানা চাষ করছেন সুস্বাদু এই বিদেশি ফল ‘প্যাশন’। ইতিমধ্যে একটি গাছে ১৮-২০টি ফল ধরেছে। এ ছাড়া আরও প্রায় এক-দেড়শ ফুল আছে। জেলায়  এই ফল আরও বেশি করে চাষের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই এ ফল চাষে প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক কৃষি পরামর্শ চেয়েছেন স্থানীয়রা। এগ্রোফার্মের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, ২০১৫ সালে ঢাকার জাতীয় বৃক্ষমেলা থেকে প্যাশন ফলের একটি কাটিং চারা এনে খামারে রোপণ করি। লতানো এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু হলে একটি মাচা করে দেই। এক বছর পর ওই গাছে ফুল ফোটা শুরু করে। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও দেখে পরাগায়নের কলাকৌশল শিখে গাছে প্রয়োগ করি। কিছুদিনের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু করে। আর আত্মবিশ্বাস ছিল ফুল যেহেতু হচ্ছে ফল হবেই। এ জন্য ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে পশ্চিমা এই ফল চাষের যাবতীয় কৌশল রপ্ত করতে থাকি। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন খামারে আসছেন প্যাশন ফল দেখতে। এখন গাছ থেকে চারা তৈরি করছি। আগ্রহী অনেকেই চারা সংগ্রহ করেন। প্যাশন চাষে কোনো সার, সেচ, কীটনাশক এমনকি বিশেষ কোনো পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবত প্রস্তুত করা যায়। এটিকে অন্যান্য জুসের সঙ্গেও মিশিয়ে খাওয়া যায়। বাজারে প্রচলিত কেমিক্যাল মিশ্রিত শরবতের চেয়ে প্যাশন বা ট্যাং ফল দিয়ে তৈরি শরবত অনেক সুস্বাদুু ও গুণ সম্পন্ন। আগামী বছর এক বিঘা জমিতে এই ফলের চাষ করবেন বলে ভাবছেন তিনি। তার খামারে ড্রাগন ফল, বারি মাল্টা-১, আম, লিচুসহ ৫০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে।

 জেলা কৃৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্যাশন বা ট্যাং ফল তুলনামূলকভাবে দেশে কম প্রচলিত। বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সীমিত আকারে চাষ হচ্ছে। এই ফলের শরবত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি এতই বেশি যে ফলের এক-চতুর্থাংশ একজন মানুষের নিত্যদিনের ভিটামিন সির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যাসিফ্লোরা ইডিউলাস’। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল আলম বলেন, প্যাশন ফলের উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্টের আমাজান অঞ্চলে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং তদসংলগ্ন প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনাতে। প্যাশন ফল একটি বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। প্যাশন ফল দুই ধরনের। পার্পল প্যাশন ফল ও হলুদ প্যাশন ফল। সাপাহার উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, সোহেল রানাকে বিভিন্ন সময় এই ফল চাষে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই ফল চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে সমাদৃত হতে পারে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেন, জেলায় প্যাশন ফলের বেশ কয়েকটি গাছ থাকলেও একটিতে সাফল্য পাওয়া গেছে। এই সাফল্য অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়ে বরেন্দ্র ভূমির পতিত এলাকা পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলাসহ জেলায় আরও ব্যাপকভাবে চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর