রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

হেভিওয়েট আর তরুণ প্রার্থীতে একাকার মুন্সীগঞ্জ

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

হেভিওয়েট আর তরুণ প্রার্থীতে একাকার মুন্সীগঞ্জ

ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জেও চলছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তৎপরতা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে চারটি সংসদীয় আসন থাকলেও

এখন তা তিনটিতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে সংসদীয় আসন সংখ্যা ১৭১, ১৭২ ও ১৭৩। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এই জেলায় রয়েছে হেভিওয়েট নেতাদের ছড়াছড়ি। অনেক তরুণ নেতাও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কার্যত এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিকল্প ধারা ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিরই প্রভাব বেশি। এখানে জামায়াত বা  ছোটখাটো অন্য কোনো দলের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। জেলার তিনটি আসনেই চায়ের কাপে এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে ঝড় উঠছে। কে কোন আসনের প্রার্থী তা নিয়েও নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে নিজেদের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সর্ব সাধারণকে। গত রমজান ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরেও ছিল প্রার্থীদের নানা আয়োজন। কোরবানির ঈদ সামনে রেখেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। তিনি ছাড়াও এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ডাবলু, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর, সিরাজদিখান উপজেলার চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম। এ ছাড়া বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুও দলের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও এ আসনে শিল্পপতি ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেখ মো. আবদুল্লাহ ও ধীরেন কুদ্দুসের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিলে। সেই সম্ভাবনা খুবই কম। বিকল্প ধারা থেকে তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে অ্যাডভোকেট শেখ মো. সিরাজুল ইসলাম দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি) এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি ও সাবেক হুইপ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি। একবার সংরক্ষিত আসনে এবং দুবার সরাসরি ভোটের মাধ্যমে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করেন। সততা এবং এলাকার মানুষের প্রতি আন্তরিকতা সবার মুখে মুখে। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এলাকাবাসী মনে করেন এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জে নৌকার বিজয় তিনি এনেছেন এবং নৌকার প্রতি মানুষের আস্থাও ধরে রেখেছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে এমপি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেনও তৎপরতা চালাচ্ছেন।

বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। তিনি নিজের মতো করে এলাকা তৈরি করছেন। তবে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোটেক আবদুস সালাম আজাদ। তিনিও এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তবে মিজানুর রহমান সিনহা কোনো কারণে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করলে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের কথাও ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়াও সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের পুত্র প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বাবুও এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির জেলার সভাপতি মো. কুতুবুদ্দিন আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মো. নোমান মিয়া ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেনও দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন।

মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া) এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন বর্তমান এমপি ও দলের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। এলাকার নেতা-কর্মীসহ সর্বসাধারণের মধ্যে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। এ ছাড়াও সাবেক এমপি এম ইদ্রিস আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান আনিস ও মীর কাদিম পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সল বিপ্লবও দলীয় মনোনয়নের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।  বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই। তবে এ আসনে বিএনপির আরেক শক্ত প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। এ আসনে সাবেক এই ছাত্রনেতারও রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলার সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল বাতেন ও আরিফুজ্জামান দিদারের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে কার্যত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে।

আগামীকাল : গাজীপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা

সর্বশেষ খবর