সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু জাহাজ আসে না মংলায়

রুহুল আমিন রাসেল ও শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

তবু জাহাজ আসে না মংলায়

পণ্যবাহী কনটেইনার জটে চট্টগ্রাম বন্দর অচল। তারপরও জাহাজ আসে না মংলা বন্দরে। দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতার ৬০ ভাগও ব্যবহার হচ্ছে না। এখানে যে জাহাজগুলো আসে, তা সরকারের আমদানি করা খাদ্যপণ্যের। এরপর ব্যবসায়ীরা যে জাহাজ ব্যবহার করে আমদানি করেন, তার শুল্কায়ন নিয়ে কাস্টমসের হয়রানির শেষ নেই। মংলা কাস্টমস হাউসের অফিস খুলনায় হওয়ায় বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদের। মংলা বন্দর ও কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মংলা বন্দরে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি অনেক কমে গেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই বন্দর দিয়ে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসা কমেছে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। আবার খুলনা অঞ্চলের পাট, চিংড়িসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিকারকরা মংলা বন্দর ফেলে চলে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বন্দরে। কারণ মংলায় কনটেইনার আনার খরচ বেশি পড়ে। এ প্রসঙ্গে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মংলা বন্দরে জাহাজ আসার হার চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া বন্দরের সক্ষমতার ৬০ ভাগই ব্যবহার হয় না। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিসিআই-এর সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, মংলা বন্দরে জাহাজ আসে না বললেই চলে। আবার পণ্যের শুল্কায়ন করতে গিয়ে কাস্টমসের সময়ক্ষেপণও চলে। উচ্চহারে শুল্ক নির্ধারণ ও হয়রানির কারণে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছেন। আমি নিজেও আমার শিল্প-কারখানার পণ্য মংলা বন্দরদিয়ে আনি না। এই বন্দর সচল রাখতে হলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বিসিসিআই-এর তথ্যমতে, মংলা বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ মাসে দু-একটা আসে। তা-ও ২০ থেকে ২৫টি কনটেইনার বহন করে। এক্ষেত্রে শুল্কায়ন করতে গিয়ে মংলা কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি করেন ব্যবসায়ীদের। যদিও তাদের ডাটাবেজে কোন ব্যবসায়ী কী মূল্যে পণ্য আনছেন, তা সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু তা না মেনে কাস্টমস অতিরিক্ত ভ্যালু নির্ধারণ করে শুল্ককর আদায় করছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট। বিদেশে আমাদের ক্রেতারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। জাহাজগুলো কনটেইনার নিয়ে অবস্থান করায় খরচ বাড়ছে। বিদেশি জাহাজগুলো এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কনটেইনারের ওপর সারচার্জ আরোপ করার। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে।

কনটেইনারের ভাড়া বাড়লে সরকারেরও আর্থিক ক্ষতি বাড়বে। আবার জাহাজ জটের কারণে সময়মতো পণ্য পাচ্ছি না। ১৫ থেকে ২০ দিন জাহাজ পড়ে থাকলে পণ্যের দামও বাড়বে। বিসিসিআই-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারলে কোনো দিনই চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট হতো না। কিন্তু এখন জাহাজ জটে সরকার ও ব্যবসায়ী সবারই আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। মংলা বন্দর সচল রাখতে হলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে হাজার হাজার কনটেইনার পরীক্ষা করেন মাত্র অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা। কিন্তু মংলা বন্দরে একটা কনটেইনারের পেছনে ৫ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা কাজ করেন। সারা দিন ও রাত চলে যায় তবুও কনটেইনার পরীক্ষা শেষ হয় না। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মংলা বন্দরের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পশুর চ্যানেলের নাব্য সংকট। এ ছাড়া পদ্মা নদী পারাপারে পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ এবং এই বন্দরের সঙ্গে রেল সংযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীদের মংলা বন্দর ব্যবহারে অতিরিক্ত খরচ হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর