সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা চান ডিসিরা

কাল থেকে ডিসি সম্মেলন

নিজামুল হক বিপুল

জেলা প্রশাসকদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিই এবারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ডিসিদের এ ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এমনটাই মনে করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্ণধার ডিসিরা। এর পাশাপাশি সম্প্রতি বরগুনা সদরের ইউএনওকে নিয়ে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাও স্থান পাচ্ছে ডিসি সম্মেলনে। এ ছাড়া মাঠ প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খবরদারির কারণে সৃষ্ট সংকট উঠে আসবে এবারের সম্মেলনে। এসব সংকট দূর করতে না পারলে মাঠপর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে বলেও মনে করছেন ডিসিরা। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ডিসিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলনের পরবর্তী কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ডিসিদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে ডিসিরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের ওপর। এ নিয়ে ডিসিদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা আছে জানিয়ে বরিশাল বিভাগের একজন ডিসি বলেন, মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে না থাকলে মাঠ প্রশাসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা থাকবে। মাঠ পর্যায়ে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, পাবলিক পরীক্ষায় নকল রোধ, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, নির্বাচন কেন্দ্র দখল, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জুয়ার আসর বন্ধ করার মতো অনেক কাজ করতে হয় জেলা প্রশাসককে। যদি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা ডিসিদের হাতে না থাকে তাহলে এসব অপরাধ বেড়ে যাবে। মাঠ পর্যায়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমালোচনার মুখে পড়বে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকরা এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। পটুয়াখালীর ডিসি ড. মাছুমুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী। তার হাতে ক্ষমতা না থাকলে প্রধানমন্ত্রীও দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের প্রধান নির্বাহীর হাতে ক্ষমতা থাকা জরুরি। আর প্রধানমন্ত্রীর হয়ে মাঠ পর্যায়ে সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন ডিসিরা। তাদের হাতে যদি ক্ষমতাই না থাকে তাহলে মাঠ প্রশাসন একটা দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তাই একাধিক জেলা প্রশাসক এবারের সম্মেলনে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসির) অন্তত ৮টি ধারা সংশোধনসহ আইন ও বিচারসম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রস্তাব দিয়েছেন। সম্প্রতি বরিশালের আদালতে কথিত মানহানির মামলায় বরগুনা সদরের বর্তমান ইউএনও গাজী তারিক সালমানকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ ও পরবর্তীতে জামিন দেওয়ার ঘটনাটিও প্রাধান্য পাবে। বরিশাল বিভাগের একজন ডিসি জানান, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়েও বরিশালের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশালের ডিসি কীভাবে তারিক সালমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস করলেন সেটি নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিসের সুযোগ নিয়েই ইউএনওর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছিল। ওই ডিসি বলেন, ডিসি সম্মেলনে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। প্রশাসনের যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়েও ডিসিরা জানতে চাইবেন। এসব বিষয় ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবার সম্মেলনেও বিভিন্ন জেলার ডিসিরা নিজ নিজ জেলার বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা নীতিমালা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জলমহাল, বালুমহাল, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরবেন ডিসি সম্মেলনে। আঞ্চলিক ইস্যুগুলোও উঠে আসছে সম্মেলনে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের কাছে পরামর্শ চাইবেন। মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক ডিসিদের নানা সমস্যা ইতিমধ্যে বই আকারে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সেশনগুলোতে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

সর্বশেষ খবর