সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশিদের দেখার কেউ নেই মালদ্বীপে

জিন্নাতুন নূর, মালদ্বীপ থেকে ফিরে

এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি এখন দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে কাজ করছেন। কিন্তু দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক ও কর্মীদের দেখার  কেউ নেই। ভিসা জটিলতা না থাকায় এবং অন এরাইভাল ভিসা হওয়ায় মালদ্বীপে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ কাজ করতে যাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ ওয়ার্কিং ভিসায় গেলেও অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশটিতে গিয়ে কাজ করছেন, যা বৈধ নয়। আর এই সুযোগে যাদের আওতায় থেকে অবৈধ বাংলাদেশিরা কাজ করছেন সেই ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রেখে মাসের পর মাস বিনা বেতনে তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। একজনকে দিয়ে তার কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে উন্নত জীবনের আশায় যাওয়া বাংলাদেশিরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগীরা সম্প্র্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দেশ থেকে শেষ সম্বল বিক্রি করে দালালকে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে ভালো কাজের আশায় এসে এখন না খেয়ে উপোস দিন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে অনেকে দেশে টাকাও পাঠাতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালদ্বীপে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও এমনও অনেকে আছেন যারা দালালদের লাখ লাখ টাকা দিয়ে মালদ্বীপে এসে এখন রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ করছেন। আবার রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে যারা কাজ করছেন তাদের নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ শ্রমিক ও কর্মীদের মালদ্বীপের আইডি কার্ড না থাকায় তাদের পাসপোর্ট মালিকরা আটকে রেখেছেন। এতে করে অসংখ্য শ্রমিক বেকায়দায় পড়ছেন। তারা কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও যেমন যেতে পারছেন না আবার দেশেও ফিরে আসতে পারছেন না। কথা হলে মালদ্বীপের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের কর্মচারী ইদ্রিস বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে এখানকার হোটেলগুলোতে কাজ করছি। কিন্তু ভালো নেই। কোনোরকমে দিন কেটে যাচ্ছে।’ তার মতে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের দিয়ে মালদ্বীপের ব্যবসায়ীরা সব কাজ করিয়ে নিলেও বেতন অন্য দেশের শ্রমিকের তুলনায় কম দেওয়া হয়। এলিট বিচ নামক এক হোটেলে গত সাত মাস ধরে কাজ করছেন মানিকগঞ্জের সুমন। সেই হোটেলে ফিলিপাইনের আরও দুই কর্মচারী থাকলেও সুমনকে দিয়ে হোটেলের সব কাজ করিয়ে নেন মালিক। চাকরি বাঁচাতে সুমনও মুখ বুজে সব সহ্য করে যাচ্ছেন। অথচ সুমনের বেতন ফিলিপাইনের কর্মীদের বেতনের অর্ধেক। হুলহুমালের এশিয়ানা রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকজন তরুণ বাংলাদেশি কর্মী জানান, বাংলাদেশি কর্মীদের দেখার জন্য মালদ্বীপে কেউই নেই। দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও তারা তেমন কোনো সাহায্য পান না। তারা আরও জানান, মালদ্বীপের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশিদের সঙ্গে বেশ দুর্ব্যবহার করেন। কথায় কথায় গালিগালাজ করেন। তারা যাতে বেতন চাইতে না পারে এ জন্য পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়। কাজ না করতে চাইলে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হয়। হালকা কিছু খাবার খেতে দেওয়া হয়। এমনকি কর্মীদের ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না।

এই কর্মীরা জানান, তারা একসঙ্গে সাত-আটজন বাংলাদেশি গাদাগাদি করে ছোট একটি মেসরুমে থাকেন। দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও হাতে টাকা না থাকায় অনেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশটির মাহফুশি দ্বীপে রাস্তা মেরামতের কাজ করেন এমন সাত-আটজন বাংলাদেশি জানান, দালালের মাধ্যমে ভিসা ফির জন্য এক লাখ টাকাসহ মোট ছয় লাখ টাকা খরচ করে ট্যুরিস্ট ভিসায় এখানে আসেন। পরে এসে জানতে পারেন যে, মালদ্বীপে কোনো ভিসা ফির প্রয়োজনই নেই। আর অবৈধ হওয়ায় এই শ্রমিকরা অন্য কোনো ভালো কাজও করতে পারছেন না। তাদের লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এই দ্বীপের স্পিডবোট চালক আরেক বাংলাদেশি যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালদ্বীপের মানুষ আমাদের মানুষ মনে করে না, দাস মনে করে।’

সর্বশেষ খবর