বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোগান্তির শেষ নেই চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ভোগান্তির শেষ নেই চট্টগ্রামে

টানা বর্ষণের পর একসঙ্গে রিকশা ও নৌকা চলছে চট্টগ্রামের অনেক সড়কে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সরাইপাড়া এলাকা। এখানকার যাতায়াতের প্রধান সড়ক আগ্রাবাদ এক্সেস রোড। সড়কটি গত দুই মাসে বৃষ্টির পানিতে অন্তত ছয়বার ডুবেছে। প্রতিবারই ডুবেছে সড়ক সংলগ্ন বিস্তৃত আবাসিক এলাকা। সড়কের পাশের ছদু মিয়া মাঝি বাড়ির বয়োবৃদ্ধ আবদুস সালাম বলেন, ‘গত দুই মাসে অন্তত ছয়বার জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হই। একবার পানি উঠলে ঘরের সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়। এসব শুকাতে না শুকাতেই ফের জলাবদ্ধতা। এই বছরের মতো দুর্বিষহ অবস্থা অতীতে কখনো হয়নি।’ কেবল পাহাড়তলী এলাকায় নয়, নগরের প্রায় প্রতিটি নিম্নাঞ্চল এখন পানির নিচে। চট্টগ্রাম নগরে গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া ভারি ও হালকা বর্ষণ থেমে নেই। কখনো মুষলধারে, কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ডিসি রোডের বাসিন্দা ফয়সাল আরেফিন বলেন, ভবনের নিচ তলায় আমাদের বাসা। ফলে প্রতি বর্ষাতেই পানি নিয়ে চলে যুদ্ধ। তবে এবার অসহনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত রবিবার থেকেই আমরা আত্মীয়ের বাসায় থাকছি। বাসার প্রায় সব আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার পথে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, নগরের ডিসি রোড সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় অতীতে যেখানে সর্বোচ্চ হাঁটু পানি উঠেছিল এমন এলাকায় গতকাল গলি এবং বিভিন্ন বাসার ভিতরে কোমর পানি হয়েছে। তা ছাড়া নগরের মুরাদপুর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দার বাড়ি সড়ক, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদিবাগ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, পোর্ট কলোনির কয়েকটি সড়ক, গোসাইলডাঙ্গা, ছোটপুল, বড়পুল, বৃহত্তর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে অন্তহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সবাইকে।  একই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। কোথাও কোথাও অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তর চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি উপজেলার সড়কগুলোর ওপর দিয়েই পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে হাটহাজারীর কুয়াইশস্থ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রোড, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোড, চট্টগ্রাম-রাউজান-রাঙ্গামাটি সড়ক দিয়ে পানি চলাচল করছে। তা ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকা এবং সড়ক দিয়েই পানি চলাচল করছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকাল তিনটা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের বৃষ্টি স্বাভাবিক। এ বৃষ্টি আরও তিন-চারদিন থাকতে পারে।’ 

জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ : চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজানে পাহাড়ি ঢল এবং নদীর পানি উপচিয়ে ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর