বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আতঙ্কে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতঙ্কে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা

আতঙ্কে দেশের বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। হুমকির মুখে পড়েছে অস্ত্র ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত প্রায় হাজার কোটি টাকা। চলতি মাসের শুরুর দিকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির আমদানিকৃত ২১টি অস্ত্র আটকের পরই শুরু হয়েছে এ অচলাবস্থা। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক গোয়েন্দাদের অজ্ঞতা কিংবা কিছু কর্মকর্তার উদ্দেশ্যমূলক এমন আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদের ব্যবসা। এ খাতে বিনিয়োগকৃত টাকার ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা রীতিমতো শঙ্কিত। কেউ কেউ বলছেন, ‘ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির ওই ঘটনার পর বিশ্বের অনেক দেশের অস্ত্র রপ্তানিকারকরা এ দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তারা পুরো বিষয়টি অবগত হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা নিজেরাও বিচলিত।’ অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, ‘বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। তিন সদস্যের একটি কমিটি তদন্ত করে দেখছে। প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’ জানা গেছে, ১৮ মে ইতালির রোম   থেকে আরমারিয়া ফ্রিনচিলুসি ইতালো কুয়েত এয়ারওয়েজের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির নামে ৫৩টি পিস্তল ও ৫টি শর্টগান পাঠায়। দুটি কার্টনে করে ৫৮টি অস্ত্রের চালান ২৭ মে বাংলাদেশে আসে। পরে ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এম এম ট্রেডার্সের মাধ্যমে ৩ জুন এয়ারওয়ে বিল জমা দেয় বিমানবন্দর কাস্টমসে। তবে ৯ জুলাই শুল্ক গোয়েন্দারা প্রথম গণমাধ্যমের কাছে ওই চালানের ২টি পিস্তল এবং এর দুই দিন পর আরও ১৯টি পিস্তল আটকের কথা ঘোষণা দেন। তারা বলছেন, অস্ত্রগুলো আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য হিসেবে আটক করা হয়েছে। ওই সময় শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, ‘আমদানি করা ওই সব অস্ত্র পরীক্ষায় দেখা যায় ১৯টি অস্ত্র পুরনো ও ফ্যাব্রিকেটেড। একই সঙ্গে অধিকাংশের বডির বিভিন্ন অংশের গায়ে খোদাই করা মুদ্রিত ইউনিক নম্বর ভিন্ন ভিন্ন। আটক করা এসব অস্ত্রের মধ্যে ওয়ালথার পিপি ১৪টি ও ৫টি এইচকেফোর ব্র্যান্ডের পিস্তল।’ তবে আমদানিকারক নূরুদ্দীন ইমরান গতকাল এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ‘আমদানিনীতি অনুসরণ করেই আমি দীর্ঘদিন অস্ত্র ব্যবসা করে আসছি। ২৯৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমি কেন পুরনো অস্ত্র আমদানি করতে যাব? বাংলাদেশের কাস্টমস গোডাউনে কেমন পরিবেশ, তা সবারই জানা। যদি এ অস্ত্রগুলো নিষিদ্ধ কিংবা পুরনো দাবি করা হয়, তাহলে আমি এ চালানটি পুনরায় ফেরত পাঠাব। তবে ইতালি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত ওই চালানটি আসতে অন্তত ১০০ জনের হাত পড়েছে অস্ত্রের ওপর। তুরস্কে আসার পর এ চালানটি পুনরায় পরীক্ষা করা হয়েছে। এ কারণেও অস্ত্রের ওপর মরিচা ধরা স্বাভাবিক।’ বাংলাদেশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক এক নেতা বলেন, ‘ইতালির পুলিশ ও কাস্টমস্ নিশ্চিত হয়েই এ চালানটি বাংলাদেশে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। অনেক কঠোর নিয়ম অনুসরণ করে অস্ত্রের ব্যবসা করি। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করি। অস্ত্র আমদানির আগে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হয়।’ বাংলাদেশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক আরেক নেতা বলেন, ‘ওয়ালথার ব্র্যান্ডের এইচকেফোর পিস্তলের চারটি ব্যারেলের মধ্যে তিনটি বাংলাদেশে অনুমোদন রয়েছে। এ পিস্তলকে নিষিদ্ধ বলার কোনো যুক্তি অন্তত আমাদের জানা নেই। তিনটি ব্যারেলে তিন ধরনের নম্বরই থাকবে। এক ধরনের নম্বর কোনোভাবেই থাকার কথা নয়। কিন্তু কাস্টমস থেকে বলা হচ্ছে, তিন ধরনের নম্বর থাকার কথা নয়।’ তিনি বলেন, ‘অজ্ঞতার কারণে এমন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কোনো পাগলও লোকসান করার জন্য ২৯৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে অস্ত্র আমদানি করবে না।’ এদিকে গত রাতে মুঠোফোনে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মইনুল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা ওই সময় বলেছিলেন ২১টি অস্ত্র পুরনো। এমনকি ওগুলো দিয়ে অনেকবার ফায়ার করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।’

সর্বশেষ খবর