বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাছ থেকেই সিদ্দিকুরকে নিক্ষেপ করা হয় টিয়ার শেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিয়ার শেলের গ্যাস গান কখনো সরাসরি নিক্ষেপ করা যায় না। নিচুতেও নিক্ষেপ করা যায় না। তাহলে শেলটা পড়ে যায় এবং বিস্ফোরিত হয় না। এটাকে মিনিমাম ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মারতে হয়; যাতে বাতাসে এটা বিস্ফোরিত হয়ে গ্যাসটা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেলটা আস্তে করে নিচে পড়ে যায়। টিয়ার শেলের আঘাতে একই সঙ্গে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে দেখতে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান  মিয়া এমনটাই বললেন। সোমবার বিকালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন মাঠে দ্বিতীয় বিভাগ কাবাডির ফাইনাল শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, টিয়ায় শেল সাধারণত পুলিশ এভাবে মারে না। ৪৫ ডিগ্রি ওপরের দিকে মারে। এটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। তবু একটা কিছু হয়তো ঘটেছে। তবে ঘটনার দিনের ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে নয়, সরাসরি খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এর পরই সিদ্দিকুর পড়ে যান। ডিএমপি কমিশনারের ওই বক্তব্যে সহপাঠী ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, পুলিশের কাঁদুনে গ্যাসের শেলের আঘাতে সিদ্দিকুরের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি চোখ যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে, ঠিক তখন কমিশনারের এমন বক্তব্য দুঃখজনক। ওই দিনের ঘটনার বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ভিডিও থেকে এটা খুব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, পুলিশ সদস্যের টিয়ার শেলের আঘাতেই সিদ্দিকুরের আজকের এ অবস্থা। দোষী পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করছেন তারা। ভারতে পাঠানো হচ্ছে সিদ্দিকুরকে : সিদ্দিকুরের বাঁ চোখের অবস্থার উন্নতি হলেও ডান চোখের উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কাল বৃহস্পতিবার ভারতে পাঠানো হচ্ছে। ওই দিনই চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে ভর্তি করা হবে। পরদিন সকালে তার চিকিৎসা শুরু হবে। জানা গেছে, সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য চক্ষু হাসপাতাল থেকে একজন চিকিৎসককে তার সঙ্গে পাঠানো হবে। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল বিকালে শঙ্কর নেত্রালয়ের রেটিনা ও ইনজুরিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. ধানত্রি রাত্রার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে। তিনি এ বিষয়ে উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। ২৮ জুলাই সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে তিনি সিদ্দিকুরের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। ওই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই সেখানে তার চিকিৎসা চলবে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সিদ্দিকুরের পাসপোর্ট হয়ে গেছে। ভিসার জন্যও আবেদন করা হয়েছে। ভিসা পাওয়ার পর বিমানের টিকিট সংগ্রহ করা হবে। বিমানের টিকিট পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার কোন সময় সিদ্দিকুরকে ভারতে নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে। এনআইও থেকে ডা. জাহিদুল হাসান ও সিদ্দিকুরের বড় ভাই সঙ্গে যাবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্দিকুরের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে জানিয়ে পরিচালক বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। এদিকে গতকাল সকালে সিদ্দিকুরকে দেখতে যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশীদ। এ সময় তিনি জানান, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ নির্ধারণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সিদ্দিকুরের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর