বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগ কমিটির দুই বছর আজ

একটি দিনও নিজের জন্য ব্যয় করিনি : সোহাগ

রফিকুল ইসলাম রনি

মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সারা দেশের ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এই দুজন নির্বাচিত হন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আজই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিটির। কেমন ছিল সোহাগ-জাকিরের নেতৃত্ব। এ সময় সংগঠনের অর্জন ও ব্যর্থতার বিশ্লেষণ চলছে কেন্দ্রীয়সহ জেলা-উপজেলার সব ইউনিটির সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন সাবেক ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও। গত দুই বছরে সোহাগ-জাকির নেতৃত্ব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪৮টি সাংগঠনিক ইউনিটিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ ইউনিটও রয়েছে। এ ছাড়া অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউনিটে সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। গতকাল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চারটি বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা, দুটি বর্ধিত সভা ও কার্যনির্বাহী সংসদের সভা করা হয়েছে। সংগঠনের গতিশীল নেতৃত্বকে জায়গা দিতে সংগঠনে বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ কেন্দ্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তবে এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলেও দেশের বিভিন্ন ইউনিটের নেতিবাচক সংবাদ গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে বারবার। কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী নেতার অপকর্মে বিব্রত সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। নিজের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা, চাঁদাবাজি ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। সিলেট, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রামে কখনো নিজেদের মধ্যে আবার কখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘লাঠিয়াল’ বাহিনী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের খুন হতে হয়েছে নিজেদের হাতেই। যেখানেই অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ, সেখানেই সোহাগ-জাকির শক্তহাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ দুই বছরে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০ ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা জানান, ছাত্রলীগ নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরেও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, খেলাধুলার মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিও পালন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ বিতরণ এবং ছিন্নমূল শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ শিক্ষার্থে আগত নবীন ছাত্র-ছাত্রী বন্ধুদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। প্রতি বছর সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রায় ৩০ হাজার ব্যাগ রক্ত দান করে থাকেন। এ বছর আটটি সাংগঠনিক টিম করে দেশের উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলা ও সিলেট অঞ্চলে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। গত মাসে ১২ জুন রাতে প্রবল বৃষ্টির ফলে রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে প্রায় ১৬৩ জন মানুষ নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম এবং ত্রাণ দেওয়ার জন্য ২৫ সদস্যের টিম পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা এ টিমে কাজ করেন। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাতে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ছাত্রলীগ তিনটি মেডিকেল টিম ও তিনটি ত্রাণ টিম পাঠায়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই সংগঠনটি। ছাত্রলীগ পরিচালনায় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করা হয়েছে। এই সংগঠনটির নাম ‘মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদ’। যেখানেই ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে সেখানেই এ সংসদ বাধ্যতামূলক। বিগত দুই বছরে নিজেদের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে সংগঠনটি। ঢাবির জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে আয়োজন করা হয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে এ খেলায় অংশ নেন। এ ছাড়া প্রতি বছর শীতকালে ঢাবি ক্যাম্পাসে ব্যাটমিন্টন খেলারও আয়োজন করা হয়।

দায়িত্ব পাওয়ার পর কেমন কাটল দুই বছর—এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই একটি দিন নিজের জন্য ব্যয় করিনি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সংগঠনকে সময় দিয়েছি। কেমন দায়িত্ব পালন করলাম মূল্যায়ন করার দায়িত্ব তৃণমূল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও আপনাদের (গণমাধ্যম)। তবে সংগঠনকে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সংগঠন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো সম্পন্ন করেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটিতে সম্মেলন চলছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ শুধু সাংগঠনিক কাজই নয়, মানবিক কাজও করেছে। বন্যায় এবং পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। শিশু ও কিশোরদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি বিতরণ করেছি। বঙ্গবন্ধুর ওপর কবিতা-রচনা প্রতিযোগিতা করেছি। সর্বোপরি দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রসহ বিভিন্ন উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। সংগঠনে বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী যেখানেই কোনো ধরনের অন্যায় করেছে সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এ পর্যন্ত ৩০৬ জনকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান ছাত্রলীগ বেশি জনসচেতন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম দিন থেকে আমরা কাজ করেছি। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারটি বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করছি। তৃণমূলে ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। সরকারের ছাত্রবান্ধব কাজগুলো আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বৃক্ষরোপণ, সামাজিক, রক্তদান কর্মসূচি করেছি। সর্বোপরি জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন, মিশন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। তরুণ সমাজকে জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

আজ শেষ হচ্ছে—বর্তমান কমিটির মেয়াদ, কবে নাগাদ সম্মেলন হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্ন ইউনিটে আমাদের সম্মেলন চলছে। আগামী তিন দিন তিনটি জায়গায় সম্মেলন হবে। ছাত্রলীগের অভিভাবক হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি যখন বলবেন তখনই আমরা সম্মেলন দিতে প্রস্তুত।

উল্লেখ, ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে সোহাগ-জাকিরসহ কমিটির পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়। আর গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে পরিশ্রমী, যোগ্য, মেধাবী, ছাত্রত্ব আছে এমন কর্মীদের স্থান দেওয়া হয়। তবে পদবঞ্চিতদের অভিযোগ ছিল কমিটিতে অযোগ্যদেরও স্থান দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর