বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজধানীবাসী নাজেহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীবাসী নাজেহাল

ঢাকায় গতকাল সড়কে পানি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজট আর যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি চরমে। দিনভর বৃষ্টিপাত, অচল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নে জলজট রূপ নিয়েছে জলাবদ্ধতায়। বেশ কিছু এলাকায় কোমর থেকে গলা পানিতে যাতায়াত করছে নৌকা। এর মধ্যে আরও দুই দিন ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশেই বৃষ্টি হয়েছে। রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকাতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৮ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিকে হালকা বৃষ্টি বলছে আবহাওয়া অফিস। আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে বলে জানান তারা। আর বৃষ্টির পাশাপাশি যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।

তীব্র যানজটে নগরজীবন : রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় থেকে শুরু করে অলিগলিতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। মূলত ঈদের পর থেকেই ঢাকার যানজট সমস্যা বেড়েছে আর বৃষ্টির কারণে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর রোডে যানজট স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া কুড়িল থেকে পল্টন পর্যন্ত যানজটের কারণে নড়ে না গাড়ি। গাবতলী, মিরপুর রোডে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। একটু যেতেই আবার থেমে যাচ্ছে গাড়ি। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরে রাস্তার তুলনায় যানবাহন অনেক বেশি। সে কারণে যানজটও এই শহরে যন্ত্রণার নাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা যেন এখন ঢাকা শহরের নিত্যদিনের বাস্তবতা। যানজট নিরসনে সরকারের প্রচেষ্টার কমতি নেই। গত সাত বছরে রাজধানীতে কয়েকটি উড়াল সড়ক ও ওভারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। অনেক স্থানের ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও যানজট কমেনি। গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি যানবাহন। যানজটে আটকে গাড়িতে বসে থেকে বিরক্ত যাত্রীরা।

সম্রাট পরিবহনের যাত্রী নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, বিমানবন্দর থেকে বনানী যাওয়ার জন্য সকাল ১০টায় বাসে উঠেছি। প্রায় ৩ ঘণ্টা হলো এখনো পৌঁছাতে পারিনি। যে কাজে যাব বলে বেরিয়েছিলাম সেখানে ১২টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু এই যানজটে পরে আমার কাজ তো হলোই না মাঝখান থেকে সময় নষ্ট হলো। শুধু একদিন নয় এরকম প্রায়দিনই রাজধানীর যানজটে ভোগান্তিতে আছে নগরবাসী। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩১৭টি নতুন যানবাহন নগরীর রাস্তায় নামছে। ফলে দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে নগরীর যানজট সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা। মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় নয় হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বের অন্য কোনো দেশে যানজটের জন্য এত বিপুল অর্থের অপচয় হয় না। শুধু তাই নয়, এ কারণে মহানগরীর ৭৩ ভাগ মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে।

খোঁড়াখুঁড়িতে নাকাল নগরবাসী : ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরে নেই কোনো পরিকল্পনা। নগরীতে যে যার ইচ্ছামতো উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। একই রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে বারবার। বছরের ১২ মাসেই উন্নয়ন কাজ চলমান থাকে। ফলে রোদে ধুলায় আর বর্ষায় কাদায় দুর্ভোগ বাড়ে নগরবাসীর। কিন্তু তাতে টনক নড়ে না কর্তৃপক্ষের। বছরের অন্য সময় ঢিমেতালে কাজ চললেও, বর্ষার আগ মুহূর্তে হাতে নেওয়া হয় নতুন খোঁড়াখুঁড়ি পরিকল্পনা। ফলে কাদা আর পানিতে সয়লাব হয়ে যায় নগরী। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খুঁড়ে চলাচলের অযোগ্য করে রাখা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে কালশী পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেলের জন্য মাটি খুঁড়ে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এই বালু বৃষ্টিতে মূল রাস্তা থেকে দুই ইঞ্চি নিচু হয়ে যাওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া মিরপুর মাজার গেট থেকে বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনারের গেট পর্যন্ত সড়ক বারবার সংস্কারের কবলে পড়ে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় কাদায় সয়লাব পুরো এলাকা। অথচ এই এলাকায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে কাদায় পিছলে পড়ে আহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পড়ে গিয়ে কাদা লেগে নষ্ট হচ্ছে ইউনিফর্ম। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললেও খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের। বাড্ডা- কুড়িল রোডের রাস্তা প্রায় তিন বছর ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। একবার ফুটপাথ সংস্কার, পরেরবার রাস্তা সংস্কার। আর বর্তমানে পানি প্রবাহের জন্য রাস্তা খুঁড়ে চলছে রিং বসানোর কাজ। পুরো রাস্তাজুড়ে মাটি খুঁড়ে রাস্তার ওপরেই রেখে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রোলার থেকে শুরু করে যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রীও রয়েছে রাস্তার ওপর। এর ফলে তিন লেনের রাস্তা পরিণত হয়েছে এক লেনে। আধা ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিতে নাভিশ্বাস উঠে এই রুটের যাত্রীদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর