বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও বেপরোয়া

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান ওরা করছেন অপরাধ

মাহবুব মমতাজী

গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও বেপরোয়া

খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌতুক, মাদক ব্যবসা ও জালিয়াতির মতো গুরুতর অপরাধের অনেক আসামিই দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পরোয়ানা থাকার পরও আসামিরা এলাকায় বেপরোয়া। তারা দিব্যি নানা অপরাধ-অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এমনকি মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

গত বছর ৭ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বাসিত খান বাচ্চুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন এক নারী। মুগদা থানায় মামলা হয়। কিছু দিনের মধ্যে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পূর্ব)। চলতি বছর ২২ জুন ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগ, ‘প্রকাশ্যে সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চু। তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তিনি মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন।’

রাজধানীর মানিকনগরে গত বছর ১৯ এপ্রিল রাতে চাঁদাবাজদের হামলায় মৃত্যু হয় সাবেক কৃষি কর্মকর্তা আবদুস শুক্কুরের (৬১)। তিনি ফার্মগেট-সংলগ্ন খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খাদ্যশস্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক। মুগদা থানায় মামলা হলে পুলিশ মন্টু, মোহাম্মদ আলী, সোহরাব ও হাফিজ আবদুল্লাহকে আটক করে। হাফিজ আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তারা মাসুদ রানা, মাহেলা, নুর ইসলাম, কাইয়ুম, আনোয়ার, বেলায়েত ও রুবেলের সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেন। আবদুস শুক্কুরের ভায়রা ভাই সালামত উল্লাহ অভিযোগ করেন, ‘মূল হোতা নুর ইসলামসহ জড়িতরা এলাকায় প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশ ধরছে না। আসামিরা এখন হুমকি দিচ্ছেন।’

সোহেল নামে একজনের বিরুদ্ধে ১৫ মে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে পল্লবী থানায় মামলা করেন মোল্লার বস্তির এক নারী। এর আগে ২১ এপ্রিল একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন আরেক নারী। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, ‘ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ থাকার পরও পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। পল্লবী ও রূপনগর এলাকায় সোহেলের নিয়ন্ত্রণে মাদকের একটি বড় সিন্ডিকেট আছে।’ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ হেল শাফির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ কাওয়ালজানী গ্রামের আনোয়ারা বেগমের। প্রতিবাদে তিনি ২১ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। আনোয়ারার অভিযোগ, ‘শাফি ও তার লোকজন বাড়িতে এসে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু মামলা নিতে রাজি হননি মির্জাপুর থানার ওসি। পরে আদালতে মামলা করলে শাফির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে পুলিশ তাকে ধরছে না।’ ২০১৫ সালের মার্চে ইয়াবাসহ আটক হয়েছিলেন আলমগীর হোসেন আলম। বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ১০ মে তিনি জামিনে বের হন। জালিয়াতি করে জামিন নেওয়া আলমের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় বছর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পুলিশ এখনো তাকে ধরেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘মিরপুরের বালুমাঠ বস্তি, ভোলা বস্তি, কালশী বস্তি, উত্তর কালশী বস্তি ও বৃন্দাবন বস্তিতে আলমের নিজস্ব আইন চলে। কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। সে যখন যা ইচ্ছা তাই করে। পরোয়ানা থাকার পরও তাকে কিছুই করে না পুলিশ।’ পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মাদকের শীর্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হযরত-রহিমা দম্পতি। জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া ও যাত্রাবাড়ী থানায় একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গেন্ডারিয়ার ঘুন্ডিগরে মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে ওই দম্পতির গড়া সিন্ডিকেট। ১৩ জুলাই অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের তিনজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সেদিন অধিদফতরের উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা রহিমা বেগম পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যায়নি। তার স্বামী হযরত আলীও মাদক মামলার পলাতক আসামি। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ৪ জুলাই ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড ইউনিটে কর্মরত এসআই জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা। ৭ জুলাই জাহিদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আমেনার অভিযোগ, ‘জাহিদ মোবাইল ফোনে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। বলেছেন, এ পরোয়ানা দিয়ে তার কিছুই হবে না।’ জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলার এসপিরা তদারকি করে থাকেন। এটি হেডকোয়ার্টারের দেখার বিষয় নয়।’

সর্বশেষ খবর