বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃক গ্যালারিতে ১১ শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী

মোস্তফা মতিহার

দৃক গ্যালারিতে ১১ শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী

ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে গতকাল চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী আব্দুস শাকুর ও কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শিল্পের সৃষ্টিতে যদি সমঝদার আর পৃষ্ঠপোষক না থাকে, তাহলে সেই শিল্পীর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারণে শিল্প, শিল্পী আর শিল্পের সমঝদার ও পৃষ্ঠপোষক— একই সূত্রে গাঁথা। নিঃসন্দেহে একটি অন্যটির পরিপূরক। খ্যাতিমান শিল্পীদের প্রদর্শনী হরহামেশা হয়ে থাকলেও অপেক্ষাকৃত কম চেনাজানা বা খ্যাতিমান নয়, এমন শিল্পীদের প্রদর্শনীর কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। আর এই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন ‘ভিশন-২৪’-এর স্বত্বাধিকারী মাহির আবরার। তাই সুযোগ না পাওয়া শিল্পীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে আয়োজন করেছেন ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর। বিদেশের মাটিতে পড়াশোনার পরও দেশাত্মবোধ  ও দেশজ শিল্প তাকে বেশি টেনেছে। সে কারণেই শিকড়ের আকর্ষণে তার এ আয়োজন। 

অ্যাক্রেলিক, চারকোল, ওয়াটার কালার, পেনসিল স্কেচের মাধ্যমে অঙ্কিত ১১ জন শিল্পীর আঁকা ৮৪টি ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে দলীয় এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন অনুপমা বিশ্বাস, আরাফাত আহমেদ আলী, বিপুল মল্লিক, ইশিকা চৌধুরী, ইশরাত জাহান তৃণা, ঐশী হোসেন, সামিরা কামিল, সানজিদা খান লোদী, সুমাইতা তাহসিন, তাহমিদা রাদি ও ওয়াদুদ কফিল।

শ্রাবণের বর্ষণমুখর বিকালে গতকাল দৃক গ্যালারিতে দুইদিনব্যাপী আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষক ও খ্যাতিমান শিল্পী আবদুস শাকুর। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। উদ্বোধন পর্বে আবদুস শাকুর বলেন, তরুণরা সবসময় ভালো কাজ করেন। শিল্পের প্রতি তরুণদের মমত্ববোধ দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা আগামীতে অনেক বড় মাপের শিল্পী হবেন বলেই আমি আশা রাখি। শিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে এমন একটি সুন্দর আয়োজন করাতে প্রদর্শনীর আয়োজক মাহির আবরারকে ধন্যবাদ জানাই। মাহির আবরার যদি এই উদ্যোগটি না নিতেন তাহলে হয়তো তরুণ শিল্পীদের এমন সুন্দর শিল্পকর্ম দর্শন থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। উদ্বোধনের পরপরই প্রদর্শনীর গ্যালারিতে ছিল শিল্পানুরাগীদের উপচেপড়া ভিড়। দর্শকদের আন্তরিক উপস্থিতি ও গভীর মনোযোগ থেকে স্পষ্ট হয়েছে, শিল্পকর্মের আঙ্গিনায় কোনো প্রতিকূলতা বাধা হতে পারে না। সে কারণেই নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে শিল্পানুরাগীরা ভিড় জমান গ্যালারিতে। যাতে করে দৃক পরিণত হয়েছিল এক সৌন্দর্যের আঙ্গিনায়। গাঁয়ের মেঠোপথ, খেয়াঘাট, পানাম নগরী, উনুনে কেতলি, ক্যালিওগ্রাফি, পাহাড়ি মা— এরকম অনন্য সব শিল্পকর্ম দিয়ে শিল্পীরা যেন একখণ্ড বাংলাদেশকেই তুলে ধরেন এখানে।

শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ও অনুরাগী মাহির আবরার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকেই ছবি আঁকেন, কিন্তু প্রদর্শনীর সুযোগ না পাওয়ায় তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটে না। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে একজন শিল্পী তার অঙ্কিত একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। আর ওই ছবিটি দেখেই সুযোগ না পাওয়া শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী আয়োজনের চিন্তা আমার মাথায় আসে। তাই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলাপ করে খুব কম সময়ের মধ্যে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করলাম। ব্যাপক পরিসরে শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দিতে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।  এক প্রশ্নের জবাবে মাহির আবরার জানান, প্রদর্শনীতে বিক্রিলব্ধ শিল্পকর্মের অর্থ ৮৫% পাবেন শিল্পী এবং ১৫% পাবেন আয়োজক। সুযোগবঞ্চিত শিল্পীদের সুযোগ করে দিতে এ প্রদর্শনীটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন।  আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে দুইদিনের এই প্রদর্শনী।

সর্বশেষ খবর