বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজবাড়ীতে দুই দলে প্রতিপক্ষ নিজেরাই

কামরুজ্জামান সোহেল, রাজবাড়ী থেকে ফিরে

রাজবাড়ীতে দুই দলে প্রতিপক্ষ নিজেরাই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন এখন মুখরিত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। সংসদীয় আসন ২০৯ ও ২১০-এ এরই মধ্যে ঝুলছে রংবেরঙের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের নামে শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি দিন বাকি নেই। জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগে অতীতের তুলনায় গ্রুপিং তীব্র থাকলেও খুব একটা প্রকাশ্য নয়। অন্যদিকে বিএনপির কমিটি ঘোষণা ঘিরে পুরনো বিরোধ নতুনভাবে বেড়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দুই গ্রুপ। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর পরও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীও মাঠে নেমেছেন। এ দুই আসনে কার্যত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। নানা দিবস ও ঈদুল আজহা সামনে রেখে শুভেচ্ছা জানিয়ে শহরময় ফেস্টুন লাগিয়েছেন প্রধান দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা পাল্লা দিয়ে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেকটা নীরবেই প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির একসময়ের ঘাঁটি হিসেবে রাজবাড়ী পরিচিত থাকলেও সেই দিন এখন পাল্টেছে। দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের দাপট বেড়েছে। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চাইছে আসন দুটি ধরে রাখতে আর বিএনপি চাইছে তাদের পুরনো আসন ফিরে পেতে। তবে ভোটের ফ্যাক্টর হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির ভূমিকা থাকবে বলেও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে। রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী একাদশ নির্বাচনেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী। জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা চেম্বারের সভাপতি কাজী ইরাদত আলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আবদুজ জব্বার, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর মর্জি, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলীর স্বামী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এস এম নওয়াব আলীও সম্ভাব্য প্রার্থী। এ আসনকে মূলত ‘কাজী-চৌধুরী’ পরিবারের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবেই বিবেচনা করছেন দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। দলের একাধিক নেতা বলছেন, ‘কাজী’ ও ‘চৌধুরী’ এ দুই পরিবার মূলত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। একে অন্যকে ঠেকাতেই ভিন্ন রাজনীতি করছেন এ পরিবারের সদস্যরা। এমপি কাজী কেরামত আলী নিয়মিত এলাকায় থেকে সভা-সমাবেশ ও নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। প্রচার-প্রচারণায় তিনি বেশ এগিয়ে। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র এবং রাজবাড়ীকে তিনি মডেল জেলা হিসেবে পরিণত করেছেন— এমন কথা বলেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। প্রচারণায় সরব রয়েছেন কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলীও। নিয়মিত তার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন— এটা প্রায় নিশ্চিত, এমনটিই জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। এ ছাড়া জেলা সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেক এবং জেলা সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আসলাম মিয়াও শক্ত প্রার্থী। সাবেক এই ছাত্রনেতা ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন। এ কারণেই আসলাম মিয়া এলাকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তবে সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেকও ব্যাপক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কার্যত বিএনপিতে তিনজনের মধ্যেই মনোনয়ন নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ আসনে বিএনপির কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। দলের কমিটি গঠন নিয়ে এ কোন্দল আগামী নির্বাচনের ফলাফলে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতা-কর্মীরা। ১০ জুলাই রাজবাড়ী জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আরেকদিকে জেলা সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, সহসভাপতি এম এ খালেক, মো. আসলাম মিয়া ও তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ গ্রুপ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই গ্রুপের নেতাদের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।  এ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন রাজবাড়ী জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক মোকলেসুর রহমান। রাজবাড়ী-২ (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান এমপি মো. জিল্লুল হাকিম। প্রায় প্রতিদিনই তিনি দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও দলীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদের মধ্যে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. ইকবাল আর্সলানও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকীও তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ। তিনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক এমপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসিরুল হক সাবুও শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে ইতিমধ্যে দলের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন কেন্দ্রের অন্যতম সদস্য ও জেলা জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার-ই-খোদা চৌধুরী। তিনি এরই মধ্যে দলীয়ভাবে এলাকায় কাজও করে যাচ্ছেন। এর বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর তত্পরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

সর্বশেষ খবর