শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
গ্রাম ছাড়তে হলো না!

শালিসের আগেই রত্না আত্মহত্যা করল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

নিজের চাচা আর গ্রামের কয়েক ব্যক্তি তাকে ‘অপবাদ’ দিয়ে বাপের বাড়ি থেকে তাড়াতে চেয়েছিল। আজ শুক্রবার এ নিয়ে শালিস বিচারের কথাও প্রচার করেছিল তারা। তার আগেই বিষ খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে রত্না খাতুন।

বছরদশেক আগে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে রত্নার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শহরের কুখরালি মহল্লার আবুল কালামের ছেলে শাহাদাত হোসেনের। তাদের সংসারে ৮ বছরের বৃষ্টি ও সাড়ে চার বছরের শাওন নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। স্বামী-শাশুড়ির সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের জেরে বছরচারেক আগে রত্না ফিরে আসে পিত্রালয়ে। সে সময় থেকে দরিদ্র প্রতিবন্ধী পিতা রফিকুল ইসলামের বোঝা হয়ে থাকলেও রত্না বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করত। এভাবেই চলছিল তার দিনকাল। রত্নার পারিবারিক সূত্র জানায়, হঠাৎ করে তাদের মেয়ে সম্পর্কে নানা কথা রটনা হতে থাকে। রত্না গ্রামের মোসলেমউদ্দিনের বাড়িতে নিয়মিত কাজ করত। মেয়ের অপবাদের কথা শুনে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা সালমা বেগম। অথচ রত্নার চাচা আক্কাজ ও সিরাজুল এবং প্রতিবেশী হায়দর আলী ও আমির আলী গ্রামে প্রচার করে ‘রত্না নষ্ট হয়ে গেছে’। ওকে গ্রামছাড়া  করতে হবে। তার আগে হবে ওর শালিস বিচার। বেশ কিছুদিন ধরে এই প্রচার দিয়েও আসছিল তারা। রত্নাও তার প্রতিবাদ করতে থাকে। তাকে নিয়ে শালিস বিচারের জন্য আজ শুক্রবার দিন নির্ধারণ করে আক্কাজ ও সিরাজুল। খবর দেওয়া হয় রত্নার শ্বশুরবাড়িতেও। স্থানীয় লাবসা ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া বাবু জানান তাকেও ওই  শালিসে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। শুক্রবার নলকুড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুলের সামনে এই শালিস বসার কথা ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক প্রচারের মুখে অপমান সহ্য করতে না পেরে বুধবার বিকালে রত্না বাবার ঘরে বসে তরল কীটনাশক খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বিষক্রিয়ায় তার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারের কাছে। সেখানে তার পাকস্থলি ওয়াশ করার কাজ চলছিল। কিছু সময় পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রত্না  খাতুন। জানতে চাইলে রত্নার মৃত্যু সম্পর্কে চাচা আক্কাজ বলেন, ‘ওর মাথা খারাপ ছিল। শ্বশুরবাড়ি যেত না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও বাপের বাড়ির লোকজন মিলে শুক্রবার বসাবসির কথা ছিল। তার আগেই সে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে’। অপবাদ দিয়ে তাকে গ্রামছাড়া করার চেষ্টার কথা অস্বীকার করেন আক্কাজ। রত্নার মৃত্যুর নেপথ্য প্ররোচনাকারী হায়দর আলী, আমির আলী ও সিরাজুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান রত্নার মৃত্যু নিয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর