শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশের মানুষ আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। কারণ তারা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। গতকাল সকালে গণভবনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে  তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত্রুপক্ষ গতবারের নির্বাচনকে নষ্ট করতে সব ধরনের চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা এখন আর বাংলাদেশকে করুণার চোখে দেখেন না বরং মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখেন। আদর্শ এবং ত্যাগের মানসিকতায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জনগণের কল্যাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্যই আমাদের রাজনীতি। কাজেই আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের একটা কথাই বলব, আপনারা যারা জনগণকে কিছু দেওয়ার ও ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করবেন তারাই রাজনীতিতে এগিয়ে যাবেন। যারাই এটা করতে পারবেন তারাই রাজনীতিতে এগিয়ে যাবেন। শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম, কী পেলাম না সেটা বড় কথা নয়, তুমি জনগণের জন্য কী করতে পারলে সেটাই একজন রাজনীতিবিদের আদর্শ হওয়া উচিত। আমি আশাকরি সেই মানসিকতা নিয়েই সবাই নিজেকে গড়ে তুলবে।

জয়ের জন্য দেশবাসীর দোয়া চাই : এ সময় নিজের ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইব, আমার ছেলে জয়ের জন্য দোয়া করবেন। গতকাল ছিল জয়ের ৪৭তম জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে শেখ হাসিনা ?গৃহবন্দী থাকাকালে সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গৃহবন্দী থাকাকালে জয়ের জন্ম ও সেই সময়ের কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তার পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। তিনি বলেন, এর কিছুদিন পরে মা, জামাল, রেহানা, রাসেলসহ ধানমন্ডির পুরনো ১৮ নম্বরের একটি একতলা বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হলো। শেখ হাসিনা বলেন, বন্দীখানায় ভেজা স্যাঁতসেঁতে ফ্লোর, সেখানে আমাদের থাকতে হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম, খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো হতো না। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জয়ের জন্মের সময় আমার মা হাসপাতালে যেতে চেয়েছিল কিন্তু তাকে যেতে দেয়নি। মা যখন যেতে চেয়েছে তখন পাকিস্তানি সেনা অফিসার বলেছিল আপনি তো নার্সও না ডাক্তারও না আপনি যেয়ে কী করবেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম রাখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয়ের জন্মের পর বন্দীখানার মধ্যে আমরা কিছুটা হলেও সজীবতা পেয়েছিলাম বলে মা তার নাম রেখেছে সজীব। জয় নাম রাখার পেছনে একটা ইতিহাস রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ এর ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আব্বা বলেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, আমি থাকতে পারব কিনা জানি না, দেখতে পারব কি না জানি না। স্বাধীনতা আমরা অর্জন করবই। আমি সে ব্যবস্থার সবই করে রেখে গেছি। তোর ছেলে হবে, সে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হবে। সে ছেলে হলে তার নাম জয় রাখবি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় জয়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ জয়ের কাছ থেকে শেখা। জয়ই আমাকে এ ব্যাপারে সব রকম পরামর্শ দিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু তারা (সন্তানেরা) কখনো টাকা-পয়সা, বিষয় সম্পত্তি বা একটা ব্যবসা, কিছুর জন্যই কখনো বিরক্ত করে নাই। সংগঠনের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহম্মদ আবু কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকবুল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদিন নাছিম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

জনসংখ্যা সমস্যা নয়, সম্পদ : দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে— এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ কর?া হয়। এটা উদ্বেগের ব্যাপার নয়। যদি তাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ করে তৈরি করতে পারি তাহলে তারাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কেননা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একমাত্র দক্ষ জনশক্তির দ্বারাই সম্ভব। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতাও জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গড়েছিলেন। টেকসই উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সর্বোত্তম পদ্ধতি-কৌশলসমূহের ওপর পারস্পরিক বিনিময়ে আইডিইবি ও সিপিএসসির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর প্রেসিডেন্ট ও সম্মেলনের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হামিদ সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন— শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিপিএসসি মহাপরিচালক এবং স্টিয়ারিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. রামহরি লামিছানে, কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, আইডিইবি এবং সম্মেলন আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান।

 

সর্বশেষ খবর