শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
নাইজেরিয়ানসহ গ্রেফতার ৯

প্রতারণার অর্থ লেনদেনে জড়িত ১২টি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে ১২টি ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশিরা প্রতারণা ব্যবসা করছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকের তালিকায় সিটি ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নামও রয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানান, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছে বিদেশিরা। এদের প্রতারণার অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের ১২টি ব্যাংককে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে গত বুধবার রাজধানীতে পৃথক অভিযানও চালানো হয়। অভিযানে চার নাইজেরিয়ানসহ সাত প্রতারক ও দুই মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— জন আগডি ইউও, লিজা আক্তার ওরফে অ্যাসতা, আফেজ, মহসিন শেখ, তাসমিয়া পারভীন ওরফে শিমু, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন, নামডি কেলভিন, জামাল হোসেন ও মজিবুর রহমান। আবদুল বাতেন জানান, যে ১২টি ব্যাংক শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে বিদেশিরা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ জমা রাখত। বিভিন্ন উপায়ে সেসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাঠানো হতো। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নাম রয়েছে। ১২টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশিরা প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করছিল। এ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রেফতারকৃত লিজার নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ টাকা অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে পাকিস্তানি নাগরিক দানেশ রিজভীর কাছে পাঠানো হয়েছে। যুগ্ম-কমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে ভেরিফিকেশনের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিতে হয়। তবে এরা কীভাবে এসব অ্যাকাউন্ট খুলে ভিকটিমদের টাকা জমা দিয়েছে, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। একটি উদাহরণ দিয়ে আবদুল বাতেন উল্লেখ করেন, ফেসবুকে কামরুজ্জামানের সঙ্গে প্রিসকা খলিফা নামে এক বিদেশি নাগরিকের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে ওই বিদেশি নারী কামরুজ্জামানকে জানান, তার বাবার নামে লন্ডনের একটি ব্যাংকে ৩.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা আছে। কিন্তু ওই টাকা তুলতে একজন বিশ্বস্ত লোক প্রয়োজন। এভাবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠার একপর্যায়ে ওই বিদেশি নারী কামরুজ্জামানকে জানান, টাকাগুলো তুলতে কিছু ‘প্রসেসিং’ খরচ লাগবে। এভাবে তাকে ফাঁদে ফেলে একাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা হাতিয়ে নেয়। একইভাবে শাহনুর হোসেন নামে আরেকজনের কাছ থেকে এরা ৪০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এদেশে অবৈধভাবে অনেক বিদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের নাগরিকরা অপরাধে জড়িত। তারা এদেশের সহজ সরল বা লোভী প্রকৃতির মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অবৈধ বিদেশিকে ধরতে শিগগিরই অভিযানে নামবে পুলিশ।

মানব পাচারকারী গ্রেফতার : আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ পল্টন থেকে মানব পাচারকারী জামাল ও মজিবুরকে গ্রেফতার করেছে। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনকে বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন দেখানোর কাজ করছিলেন। জানা গেছে, প্রলোভনে পড়ে গ্রামের মানুষ জমিজমা বিক্রি করে এই প্রতারকদের জন্য টাকা জোগাড় করে। পরে তাদের ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। এরপর এরা নিজস্ব লোকজন দ্বারা রিসিভ করে তাদের আটকে ফেলে। পরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের স্বজনদের কাছে মোবাইলে ফোন করিয়ে এ চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারবার করে।

সর্বশেষ খবর