শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক অখণ্ডতা আমলে নেওয়ার পরামর্শ

শুরু হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ

গোলাম রাব্বানী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপে বেশ কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছে কমিশন। ইসির প্রস্তাব— আইন সংস্কার করে শুধু জনসংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে জনসংখ্যা, ভোটার ও আয়তন আমলে নেওয়া যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার সমতা বজায় রেখেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। জেলাভিত্তিক বিদ্যমান আসনগুলো বহাল রেখে যতদূর সম্ভব প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক সম্প্রসারণ-অখণ্ডতা রাখলে ভালো হবে। ভোটার সংখ্যার অনুপাত আমলে নেওয়ার প্রস্তাব সঠিক নয়।

ইসি মনে করছে, রাজধানীর মতো বড় শহরে আসন সংখ্যা সীমিত করে নির্দিষ্ট করে দেওয়াও প্রয়োজন। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন ১৬ জুলাই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। জুলাই-আগস্টে কাজ শুরু করে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রোডম্যাপে। কর্মপরিকল্পনায় কমিশন বলেছে, ১৯৭৬ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বিন্যাসের ব্যবস্থা আছে। আসন বিন্যাসে প্রশাসনিক অখণ্ডতা অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়েও আইনে নির্দেশনা রয়েছে। অনেকে কাজের প্রয়োজনে শহরে থাকলেও ভোটার গ্রামের। এ জন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জনসংখ্যার সমতা রেখে প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে নবম সংসদের সময় সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে পরিবর্তন আনে এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ‘জনসংখ্যা অনুপাতে যতদূর সম্ভব সমতা রেখে আসন পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ভোটারের ভিত্তিতে করলে ভুল হবে। জনসংখ্যাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আবার আয়তনের কথাও বলা হচ্ছে, এসব করলে আইনকে পাশ কাটানো হবে। সংবিধান ও আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। তাই জেলাভিত্তিক বিদ্যমান আসনগুলো বহাল রেখে যতদূর সম্ভব জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক অখণ্ডতা আমলে রেখে কাজ করা ভালো।’ ২০০৭-২০১২ সময়ের এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘জনবহুল শহরগুলোর আসন নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব ইতিবাচক ও সময়োপযোগী। যেভাবে শহরে লোক বাড়ছে তাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অনেক এলাকায় হু হু করে আসন বাড়াতে হবে। কিন্তু শহরের আসন বাড়ানো আর ঠিক হবে না।’ ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। ছহুল হোসাইন বলেন, ‘ভোটার সংখ্যা-আয়তন আমলে নিতে গিয়ে সিইজিআইএস আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সীমানা অধ্যাদেশ সংস্কার, সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি-নিষ্পত্তি করা রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়ে সম্ভব হবে না। সমালোচনা বাড়বে, ঝামেলাও বাড়বে। তাই সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সতর্কভাবে এগোতে হবে কমিশনকে।’ বর্তমানে ঢাকা জেলায় ২০টি সংসদীয় এলাকা, যার ১৫টিই মহানগরীতে। অষ্টম সংসদে এ সংখ্যা ছিল জেলায় ১৩ ও মহানগরীতে ৮। আগামী সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আইন সংস্কারের চিন্তা করছি। এটা অনুমোদিত হয়ে আইনি কাঠামোতে রূপান্তর হলেই নীতিমালাসহ অন্যান্য বিষয় ডেভেলপ করব। রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে সংলাপে সবাই যদি ঐকমত্যে পৌঁছান, তাহলেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে।’ এই নির্বাচন কমিশনার জানান, সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে দ্রুত আইন সংস্কারের কাজেও হাত দেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর