শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই

পিরোজপুর প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই

মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ (অব.) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেল হত্যা মামলার সাক্ষী। ইতিহাসের নানা অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত সুন্দরবনের বাঘ খ্যাত স্বাধীনতার এ বীর সেনানী গতকাল সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। পারিবারিক জীবনে তিনি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। জানা যায়, প্রায় ২ বছর ধরে জিয়াউদ্দিন আহমেদ লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন। প্রায়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সর্বশেষ ১ জুলাই অসুস্থ হওয়ার পর তাকে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ। মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বীরত্বের সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত রাখার জন্য তাকে সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ বলা হয়। সুন্দরবন রক্ষার জন্য তিনি ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কখনো  জেলেদের নিয়ে, কখনো প্রশাসনের সহায়তায় ওই অঞ্চলে ডাকাত নির্মূলে তিনি ভূমিকা পালন করেন। ডাকাতরা কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ১৯৬৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে ছুটিতে বাড়ি আসেন এবং ২৭ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে তিনি পিরোজপুর শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন এবং সুন্দরবনে ঘাঁটি স্থাপন করেন। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীনে সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে সুন্দরবনেই সদর দফতর স্থাপন করে যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে ক্যাপ্টেন ও পরে মেজর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর পর পর দুটি সেনা অভ্যুত্থান কালে মেজর জিয়া সরকারি কাজে পিরোজপুর শহরে মুক্তিবাহিনী সদস্যদের পুলিশে ভর্তির জন্য পিরোজপুরে ছিলেন। ঢাকায় ফিরে কর্নেল তাহেরের নির্দেশে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দুর্গম মাঝের চর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কর্নেল তাহেরসহ মেজর জিয়া এবং জাসদ নেতৃবৃন্দের বিচার হয়। এ বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি এবং মেজর জিয়াকে যাবজ্জীবনসহ অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। ১৯৮০ সালে তিনি সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান এবং জাসদে যোগ দেন। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি সুন্দরবনে দুবলার চরে মাছের ব্যবসা শুরু করেন এবং জেলেদের আর্থিক নিরাপত্তা, জলদস্যু দমন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮৯ সালে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর পর ১/১১ সময় সেনা সমর্থিত কিংস পার্টির সঙ্গে জড়িত হলে আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব হয়। এর পরেও  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী মনে করা হতো। তিনি ছিলেন ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলার সাক্ষী। এ ছাড়া জেল হত্যা মামলারও সাক্ষী ছিলেন তিনি। এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ.ম.  রেজাউল করিম, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান খালেক, পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মসিউর রহমান মহারাজ, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা সালমা রহমান হ্যাপীসহ বিভিন্ন সংসঠনের নেতৃবৃন্দ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর