রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবাই পাবে নিরাপদ পানি

পানি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাই পাবে নিরাপদ পানি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার, জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বিভাগীয় সদরগুলোয় ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারব। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন    দিনব্যাপী ‘ওয়াটার   সামিট-২০১৭’-এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ১২টি দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশে এক শ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নামে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যাতে এক শ বছরে পানির প্রাপ্যতা, তার ব্যবহার এবং প্রতিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পানির বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে সমতল, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়েছে। আর্সেনিক ও লবণাক্ততা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের অপ্রতুলতা, পানির অপচয় এবং শিল্পবর্জ্যসহ নানা কারণে পানি দূষণ বাংলাদেশে পানির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় মূল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যার অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে ১ হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়। পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য পানিকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগে। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সমগ্র প্রাণিকুলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পানের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় এক শ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় এক শ সাত কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। মানুষের সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি ও প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরও বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে। ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোয় বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর্সেনিক সমস্যা মোকাবিলায় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন, লবণাক্ত পানি-প্রবণ এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে ৭ হাজার পুকুর এবং ৩২ হাজার ৬০০ গভীর কূপ খনন করা, বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭০০ জলাধার নির্মাণ, শিল্পাঞ্চল, বড় বড় আবাসিক এলাকায় জলাধার তৈরি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেওয়া, নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রমসহ নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হয়ে উঠেছিল। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। আয়বৈষম্য হ্রাস, স্বল্প ওজন শিশুর সংখ্যা কমানো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে লিঙ্গসমতা অর্জনে বিশেষ সাফল্য এসেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া সন্তান প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। এসবের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা জাতিসংঘের ‘এমডিজি অ্যাওয়ার্ড’, ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’, ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’, ‘ইউনেস্কো পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোয় বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শতকরা ৯০ শতাংশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই বন্যা এবং অন্যান্য পানিবাহিত দুর্যোগে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সমগ্র প্রাণিকুলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। এলজিআরডি এবং সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর