রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘মালয়েশিয়া’ ফাঁদে সর্বস্ব হারাল যুবক

মাহবুব মমতাজী

বন্ধুর পাতা মালয়েশিয়ার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে শরিফুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবক। বন্ধুকে বিশ্বাস করাই কাল হয়েছে তার। যে কারণে অনেকটা পথে বসে বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, শরিফুলের বন্ধু কামরুজ্জামান রানা তার ২১ জন স্বজনের প্রায় ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। রানা নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের বড় ব্যবসায়ীদের অন্যতম। ৯ জুলাই রাজধানীর শাহআলী থানায় প্রতারণার অভিযোগে রানার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেফতারের পর রানাকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২২ জুলাই আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পশ্চিম বিভাগ। এজাহার সূত্রে জানা যায়, শরিফুল ২০১৪ সালে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) থেকে পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়া যান। সেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরিও করেন। কিছুদিন পরে তার সঙ্গে কুয়ালালামপুরে পরিচয়ের পর ভালো বন্ধুত্ব হয় রানার। বাংলাদেশ থেকে কম খরচে মালয়েশিয়াতে ছাত্র নেওয়ার কাজে শরিফুলকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তাব দেয় রানা। এ প্রস্তাব অনুযায়ী নিজের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে ২১ জনকে জোগাড় করেন শরিফুল। আর এসব ছাত্র পাঠানোর কাজ করার জন্য রানা মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকার বাগদাদ শপিং কমপ্লেক্সে একটি অফিস নেয়। ওই অফিসের নাম ছিল আল হাদি ওভারসিজ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শরিফুল বাংলাদেশে এসে তার এলাকা রংপুর থেকে ২১ জনের কাছ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নেন। সব টাকা একত্র করে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি শরিফুল ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকা রানাকে দেন। বিনিময়ে রানা ২১টি মালয়েশিয়ান অ্যাপ্রোভাল লেটার শরিফুলের হাতে বুঝিয়ে দেন। আগে শরিফুল আরও ১১ লাখের মতো নগদ টাকাও দিয়েছিল। টাকা পেয়ে পরদিন থেকেই উধাও হয়ে যান রানা।

 বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে রানাকে না পেয়ে অ্যাপ্রোভাল লেটার যাচাইয়ের জন্য ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ান দূতাবাসে যোগাযোগ করেন শরিফুল। সেখান থেকে তাকে জানানো হয় সব অ্যাপ্রোভাল লেটার ভুয়া। তিনি বুঝতে পারেন রানা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং বিষয়টি তিনি তার পরিবার ও স্বজনদেরও জানান। শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রতারিত হওয়ার পর থেকে তিনি তার বাড়িতে যেতে পারছেন না। বাবার যা জমিজমা ছিল তা বিক্রি করে তিনি কিছু লোককে টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর যারা পাননি তারা তার শিক্ষাগত সনদ ও পাসপোর্ট জব্দ করে রেখেছে। এখন রাজধানীতে বিভিন্নজনের সাহায্যে জীবন চালাতে হচ্ছে তাকে। এ বিষয়ে ডিবির (পশ্চিম) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, আমরা তো টাকা উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারব না। আইনগত যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হয়েছে। ওই প্রতারককে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুতই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর