সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

টিএসসিতে সর্বশেষ গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন

ফরহাদ উদ্দীন

টিএসসিতে সর্বশেষ গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সন্ধান মিলে এদেশে গ্রিকদের সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্নের। তৎকালে নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী ‘ডিমিট্রিয়াস’ নামক এক গ্রিক পরিবারের চার সদস্যের স্মৃতিতে নির্মিত একটি সমাধিসৌধ রয়েছে এখানে। আনুমানিক ১৮০০-১৮৪০ সালের দিকে নির্মিত হয় এটি। টিএসসির ভিতরে সবুজ মাঠের দক্ষিণ কোণায় অবস্থিত এ সমাধিটি। হলুদ রঙের এই সমাধিসৌধটি দেখতে চতুষ্কোণ আকৃতির কুটিরের মতো। ভিতরে প্রবেশের পথ রয়েছে পূর্ব দিকে। চারদিকে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো এটি। ভিতরে প্রবেশের দরজার ওপর গ্রিক ভাষায় লেখা রয়েছে যার বাংলা অনুবাদ— ‘তারাই আশীর্বাদ প্রাপ্ত যারা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছে মৃত্যুর জন্য’। ভিতরের দেয়ালে রয়েছে কালো রঙের ৯টি পাথর বা শিলালিপি। এর পাঁচটিতে গ্রিক এবং চারটিতে ইংরেজি ভাষায় লেখা।

ঢাকায় ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে ১৭ শতকের প্রথমভাগে। ব্যবসার উদ্দেশে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজদের সঙ্গে গ্রিকরাও ঢাকায় আসে। ভারতে গ্রিকদের আগমন ঘটে ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে। উপমহাদেশে যে সব গ্রিক এসেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ছিল ব্যবসায়ী। অধিকাংশ গ্রিকের ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। ১৭৭০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে ঢাকায় দুই শতাধিক গ্রিক বসবাস করত। তারা বিশেষত কাপড়, পাট, লবণ ও চুনের ব্যবসা করত। এখান থেকে পাট ও কাপড় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত। ব্যবসায়-বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বংশ পরম্পপরায় থেকে যান দীর্ঘদিন। তাদের অনেকেই এদেশে মৃত্যুবরণ করেন এবং এখানেই সমাহিত করা হয়। বহু সময় ধরে গ্রিকরা এখানে বসবাস করলেও বর্তমানে দেশে তাদের কোনো স্থাপত্য নেই বললেই চলে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে গ্রিক কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় যেসব গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন ছিল তা সব বিলীন হয়ে গেছে। অযত্ন-অবহেলায় অনেকটা বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে এই সৌধটি। দেয়ালের কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গ্রিক হাইকমিশনের অর্থায়নে সংস্কার করা হয়েছিল এটি। গ্রিক সভ্যতার এই স্মৃতি চিহ্নটির কথা জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। মূলত কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবকেই এর জন্য দায়ী করেছেন তারা। এসএম হলের শিক্ষার্থী আসিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাধিটি যদি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকত তাহলে সবাই এটি সম্পর্কে জানত। কিন্তু বন্ধ থাকার কারণে অনেকের এটি সম্পর্কে ধারণা নেই।

সর্বশেষ খবর