শিরোনাম
সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানি নিষ্কাশন নয়, বেশি আগ্রহ পরিশোধনে

ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো কাজ নেই, বসে বসে বেতন পান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গত চার বছর ধরে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো নিষ্কাশন প্রকল্প হাতে নেয়নি ওয়াসা। জলাবদ্ধতায় মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলেও ড্রেনেজ সার্কেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ পানি পরিশোধনে বিতর্কিত প্রকল্প পাস নিয়ে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত সময় পার করছেন ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ড্রেনেজ সার্কেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে তাদের কোনো কাজ নেই। আগের প্রকল্পগুলো ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার পর তিনটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সেগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ওয়াসা। সেগুলো পরিকল্পনা কমিশনে দুই বছর পড়ে আছে। এর মধ্যে আছে ৫০০ কোটি টাকায় রাজধানীর পাঁচটি খাল উদ্ধার প্রকল্প। খালগুলো হচ্ছে : হাজারীবাগ, মুগদা-বাসাবোর মাণ্ডা, মিরপুরের বাইশটেকি ও সাংবাদিক কলোনি খাল। বেগুনবাড়ি খালটি হাতিরঝিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রকল্প থেকে এ খালটি বাদ দেওয়া হয়। তবে নাম পাঁচ খাল উদ্ধার প্রকল্পই থেকে যায়।

আরেকটি ছিল ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা শহরের বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প’। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জরুরি  ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা বলা হয়। তৃতীয়টি ছিল ২৪ কোটি টাকার আগারগাঁও এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প। ওই প্রকল্পও গত দুই বছর ধরে পরিকল্পনা কমিশনে পড়ে আছে। প্রকল্পে বলা হয়েছিল খালগুলো উদ্ধার করে পাড় বাঁধাই করলেই বৃষ্টির পানি নদীতে চলে যাবে। কিন্তু সেগুলো খাতা কলমেই থেকে গেছে।  জানা যায়, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের ব্যর্থতার কারণে ১৯৮৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত করা হয় ড্রেনেজ বিভাগ। ১৯৯১ সালে ঢাকা ওয়াসা ‘ড্রেনেজ সার্কেল’ নামে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য একটি পৃথক শাখা গঠন করে। সেগুনবাগিচায় ড্রেনেজ সার্কেলের বিশাল কার্যালয়। তারা ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প ১ ও ২’ এর কাজ ২০১৩ সালে শেষ করে। এর পর থেকে ওই শাখার কয়েকশ জনবলের কাজ নেই।  সরেজমিন ওয়াসার ড্রেনেজ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১১টা অথচ কোনো কর্মতত্পরতা নেই কার্যালয়ে। অধিকাংশ কক্ষের কর্মকর্তারা তখনো আসেননি। একটি কক্ষে খোশ গল্প করছেন চারজন আর চলছে চা-নাস্তা খাওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, এটা শুধু আজকের না, প্রতিদিনেরই চিত্র। তারা বেলা করে অফিসে আসেন আর ১টা বাজতেই বাসার উদ্দেশে রওনা হন। অথচ এখানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রয়েছেন দুজন। পাঁচজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও ২০ জন সহকারী প্রকৌশলীসহ দুই শতাধিক জনবল বিদ্যমান। উচ্চপদের একাধিক অভিজ্ঞ প্রকৌশলীসহ বড় কলেবরের জনবল থাকলেও জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। ওয়াসার ড্রেনেজ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ড্রেনেজ শাখায় আমাদের যে জনবল রয়েছে তাদের কোনো কাজ নেই। কয়েক বছর ধরে আমরা বসে বসে বেতন নিচ্ছি। এত জলাবদ্ধতা তারপরও কাজ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা জানি না, জলাবদ্ধতা এত বেড়ে যাওয়ার পরও আমাদের কাজ নেই কেন। এটা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।  অথচ ওয়াসার ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের কাজে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৯০০ কোটি বেশি চাওয়া ‘ডিগ্রিমেন্ট-ওটিভি জেভি’ নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমোদন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ওয়াসার কিছু কর্তাব্যক্তি। এ পর্যন্ত তিনবার ওই প্রকল্প ওয়াসা বোর্ডে উঠলেও সদস্যদের আপত্তি থাকায় পাস হয়নি। কিন্তু তারপরেও চলছে প্রকল্প পাসের প্রক্রিয়া। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে পানি এনে সাপ্লাই করা হবে ঢাকা শহরে। পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কোনো আগ্রহ না থাকলেও পানি পরিশোধন প্রকল্প পাসে ভীষণ কর্মব্যস্ত তারা।

 

সর্বশেষ খবর