সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেয়েদের বাল্যবিয়ে বেশি বন্যা ও ভূমিধসপ্রবণ এলাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবও এখন বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে বন্যা, ভাঙন-ভূমিধস ঘটছে—এমন এলাকার মেয়েশিশুদের বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। দুর্যোগপ্রবণ এই এলাকাগুলো থেকে দরিদ্র মানুষ ঘরবাড়ি ও সর্বস্ব হারিয়ে শহরের দিকে ছুটছেন। ব্যয়বহুল নগরজীবন ও কন্যাসন্তানের নিরাপত্তা দিতে না পারায় অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এ তথ্য জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক এই সংস্থার সূত্র জানায়, প্রতিবছর বাংলাদেশের মানুষ বন্যা, ভূমিধস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ছেন। তারা প্রত্যক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার। দুর্যোগপ্রবণ এসব এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। তাদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ ও মত্স্য শিকার হওয়ায় শহরে জীবনধারণে হিমশিম খাচ্ছেন। অভিভাবকরা এই দরিদ্রতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। এমনই পরিস্থিতির শিকার ভোলার কিশোরী শারমিন আক্তার। সে জানায়, নদী ভাঙনের কারণে গত বছর তারা ঢাকায় এসে পল্লবীর দুয়ারি পাড়ার বস্তিতে বসবাস শুরু করে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মা-বাবা তার বিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে স্বামী তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করে। শারমিন এখন এক কন্যাসন্তানের মা। গৃহকর্মী শারমিন আরও জানায়, তার ছোট বোন রুপারও এ বছরের শুরুতে বাল্যবিয়ে হয়। সেও স্বামী পরিত্যক্তা—দুয়ারিপাড়া বস্তিতেই মা-বাবার সঙ্গে থাকছে। ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ সীমা সেন গুপ্তা সাত মাস ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিয়ে কতটা কমেছে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের নতুন সংশোধনীটিও কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের কম বয়সে বিয়ের মতো ঘটনা বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে এই আইনের বিশেষ অবস্থার সুযোগ নিয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার স্থানান্তরিত মানুষ সন্তানদের কম বয়সে বিয়ের সুযোগ পাবেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে।’ সরকার যদিও বাল্যবিয়ে কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কাজ করছে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাও। দেশজুড়ে চার হাজারের বেশি ইয়ুথ ক্লাব গঠন করা হয়েছে। যেসব কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ের আশঙ্কা আছে, তাদের নজরদারি করছে ইয়ুথ ক্লাব। প্রয়োজনে সেই কিশোরীকে সাহায্য করতে ভূমিকা রাখে এ ক্লাব। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত একটি ভালো আইন থাকলেও দেশে ৬৪ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বিয়ের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপের ফলে বাল্যবিয়ের প্রবণতা কমেছে।’ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘আমরা নারী ও শিশু উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেও এ কথা বলতেই হবে, বাল্যবিয়ে ঠেকানো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এটি পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। দরিদ্র অভিভাবক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে শহরে আসছেন, তারা সুরক্ষার নামে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। অথচ সে শিশু—শারীরিক বা মানসিকভাবে বিয়ের মতো সম্পর্কের জন্য প্রস্তুতই নয়।’

 

সর্বশেষ খবর