মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

চতুর্মুখী সংকটে হজযাত্রীরা প্রতিদিন বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট

মোস্তফা কাজল

চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে হজ ব্যবস্থাপনা। দিন দিন সংকট যেন বাড়ছেই। গত তিন দিনে ভিসা জটিলতায় হজযাত্রী সংকটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের একটিসহ পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট দিন তারিখে হজে যেতে না পেরে এক বুক হতাশা নিয়ে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন প্রায় দেড় হাজার হজযাত্রী। আর সমসংখ্যক হজযাত্রী ক্যাম্পের স্থান সংকটে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। সংকটের মধ্যে রয়েছে, ই-ভিসা জটিলতা, রিপ্লেসমেন্ট, যথাসময়ে পুলিশ প্রতিবেদন না পাওয়া এবং হজ এজেন্ট ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা। গতকাল সরেজমিন হজ ক্যাম্প ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

গতকালও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিডিউল হজ ফ্লাইট বিজি-৩০২৯ ও বিজি-৩০৩১ বাতিল করা হয়। হজযাত্রী সংকটের কারণে ফ্লাইট দুটি বাতিল করা হয়। ফ্লাইট দুটির গতকাল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে এবং আজ  ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে সৌদির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য সময় নির্ধারিত ছিল। ভিসা জটিলতায় ও হজযাত্রী সংকটের কারণে এ নিয়ে বিমানের মোট চারটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। হজ ক্যাম্প ঘুরে আরও দেখা গেছে, ক্যাম্পের নিচতলায় দুই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে এখানে সেখানে ছোটাছুটি করছেন। কথা বলে জানা গেছে এ দুজন চট্টগ্রামের পাঠানটুলির রহিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী কুলসুম বেগম। তারা হজে যাওয়ার জন্য এ বছর আল ফাহাদ হজ এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তিন দিন আগে ক্যাম্পে এসেছেন। কিন্তু তাদের ভিসা না হওয়ায় মোয়াল্লেম দুজনকে  ফেলে অন্যদের নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন। রহিম উদ্দিনের মতো আরও অনেকে এমন সমস্যা নিয়ে অবস্থান করছেন হজ ক্যাম্পে। রহিম উদ্দিন বলেন, এখন আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। মোয়াল্লেম প্রতিনিধিকেও খুঁজে পাচ্ছি না। খুলনার খালিশপুর থেকে হজক্যাম্পে এসেছেন আফসার আলী ও আহসান আলী। এজেন্সিকে জনপ্রতি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এজেন্সি মালিক বিভিন্ন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলে দুই দফায় আরও ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। হজ ক্যাম্পে আসার পর আরও ১০ হাজার টাকা দিতে বলেছেন। আফসার আলী বলেন, টাকা দেওয়ার কথা আগে বলেনি। এজেন্সির প্রতিনিধি নূরে আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেন, কোনো সমস্যা নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। আবুল কালাম নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, তিনি ভেজা হাতে ই-ভিসার পত্রটি ধারায় কিছুটা নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তার যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। ই-ভিসা পদ্ধতি এ বছর চালু করায় অনেকে বুঝতে না পারায় এবং আবার অনেকে ভিসার কাগজটি না নেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। গোলাম রহমান নামে দিনাজপুরের যাত্রী বলেন, পুলিশ আমার ভেরিফিকেশন না পাঠানোর কারণে আমার ভিসা হয়নি। ফরিদপুরের হজযাত্রী মনির হোসেন ও দুলাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, হজ ক্যাম্পে হজ সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে গিয়ে সেবা কেন্দ্র থেকে ফেরত এসেছেন। জামালপুর জেলার মেলান্দহ থেকে হাবিবুর রহমান এবং তার ভাই ও ভাবী একসঙ্গে হজে যেতে ক্যাম্পে এসেছেন। কিন্তু মোয়াল্লেম শুধু হাবিবুর রহমানের ভিসা করতে পেরেছেন। সেখানে উপস্থিত হজ এজেন্সির মোয়াল্লেম ফখরুল ইসলাম বলেন, রিপ্লেসমেন্টের কারণে চারজনের ভিসা এখনো করতে পারেননি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে তাদের ভিসা হতে পারে। এদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের অনেকেরই পাসপোর্টে মোয়াল্লেম নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা সংবলিত স্টিকার সংযুক্ত না থাকায় জেদ্দায় পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করে যাত্রীদের বাসে উঠে রওনা হতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যেই প্রত্যেক হজযাত্রীর পাসপোর্টে স্টিকার সংযুক্ত করতে দাফতরিক নির্দেশনা জারি করা হলেও অনেক এজেন্সি তাদের যাত্রীদের পাসপোর্টে  মোয়াল্লেম নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা সংবলিত স্টিকার সংযুক্ত না করে হজযাত্রী পাঠাচ্ছে। জানতে চাইলে হজ অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও মোয়াল্লেম নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা সংবলিত স্টিকার না থাকায় বেসরকারি হজযাত্রীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর