বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হজ ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি চরমে

যাত্রী সংকটে ১৩ হজ ফ্লাইট বাতিল, আজ জরুরি সভা ডেকেছেন বিমানমন্ত্রী

মোস্তফা কাজল

হজ ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে চরম ভোগান্তি। প্রায় ৪০ হাজার হজযাত্রীর যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতির প্রাক-নিবন্ধনের সময়ও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এ কারণে টাকা জমা দিয়েও অনেকে হজে যেতে পারছেন না। আবার যারা নিবন্ধন করেছেন তারাও নতুন করে ই-ভিসা জটিলতায় পড়েছেন। বাড়ি ভাড়া জটিলতাও রয়েছে। জেলা পর্যায়ে হজ এজেন্সিগুলোর বিভিন্ন লোকাল এজেন্টের মাধ্যমেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হজযাত্রীরা। নানা কারণে গতকালও চারটি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। আজকেরও চারটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের ১টি ও বিমানের ১২টি— মোট ১৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল হলো। হজযাত্রী সংকটের কারণে চরম বিপর্যয়ের মুখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হজ ফ্লাইট শিডিউল। প্রতিদিনই বাতিল করা হচ্ছে নির্ধারিত ডেডিকেটেড ফ্লাইট। গত কয়েক বছরে এত জটিলতায় আর পড়েননি হজযাত্রীরা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল একটি অনুষ্ঠানে নিজেই ৪০ হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন।

জানা যায়, ফ্লাইট বাতিল হওয়া উড়োজাহাজের প্রতিটিতে ৪১৯ জন হজযাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। গতকালও ভিসা পেতে কয়েক হাজার হজযাত্রী দিনভর খোঁজখবর নিয়েছেন আশকোনা হজ অফিসে। হজ ক্যাম্পে এখন তিল ধারণের জায়গা খালি নেই। যাত্রী সংকটে একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় জরুরি সভা ডেকেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আজ বেলা পৌনে ১২টায় সচিবালয়ের বিমান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন। জরুরি সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (হাব) সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন। সভা শেষে বিমানমন্ত্রী চলমান জটিল পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। হজযাত্রী না পাওয়ায় গতকালের চারটি হজ ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের ভিসা না হওয়ায় ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে বিমানকে। এ সংখ্যা বেড়ে ১৩-তে ঠেকেছে। এ ১৩টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ৫০০ হজযাত্রী যেতে পারতেন।’

হজ অফিস ও এজেন্সি-সংশ্লিষ্টরা জানান, হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রীর ই-ভিসা যথাসময়ে প্রিন্ট হয়নি। এমন জটিলতা চলতে থাকলে, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া জেদ্দা ও মদিনায় গিয়ে আরও ৩ হাজার হজযাত্রী আর্থিক কারণে বর্ধিত মুয়াল্লিম ফি জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ৪০ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে। সৌদি আরবের ই-হজ সিস্টেমের সার্ভারে সমস্যার কারণেই এ জটিলতা হচ্ছে বলে হজ অফিস ও হজ এজেন্ট-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফেরত আসা ভিসার আবেদনগুলো আবার পাঠানো হবে দূতাবাসে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হজযাত্রী রুহুল আমিন বলেন, ‘তিন দিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যেই আমার দিন কাটছে হজ ক্যাম্পে। ভিসা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে সৌদি আরব যেতে পারিনি।’ জানা গেছে, এ বছর ই-ভিসা জটিলতার প্রধান কারণ হচ্ছে ভিসাপ্রাপ্তিতে বিলম্ব। এ ছাড়া সৌদি আরবের মুয়াল্লিম ফি ও পুনঃহজ ফি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের। পবিত্র হজ নিয়ে এ বছরের শুরুতেই জটিলতা দেখা দেয়। প্রাক-নিবন্ধন নিয়ে এ জটিলতার শুরু। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাক-নিবন্ধন করতে গিয়ে অনেকেই আগে টাকা জমা দিয়েও সিরিয়ালে অনেক পেছনে পড়ে যান। এ কারণে তারা মূল নিবন্ধন করতে না পারায় এ বছর হজে যেতে পারছেন না। এসব কারণে দেড় হাজারের মতো বেসরকারি এজেন্সি থাকলেও চলতি বছর মাত্র ৬৩৫ এজেন্সির অধীনে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাকিরা কোটাবঞ্চিত হয়েছেন। ২৪ জুলাই চলতি বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হয়। এর পর থেকেই নানা জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে সৌদি সরকার এ বছরই প্রথম ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকরা। সৌদি ই-হজের সার্ভার জটিলতাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে ই-ভিসা পাচ্ছেন না অনেক হজযাত্রী। এ কারণে নির্ধারিত ফ্লাইটে সৌদি আরব যেতে পারছেন না তারা। পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ফ্লাইটে ওঠার শেষ মুহূর্তেও ভিসা না পাওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে অনেককে।

পুনঃহজের বাড়তি ফি : ২০১৫-১৬ সালে যারা হজ করেছেন তারা এ বছরও হজ করতে চাইলে তাদের ভিসা বাবদ অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) দিতে হচ্ছে। ফ্লাইট শুরুর এক দিন পর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ আকস্মিক একটি সার্কুলার জারি করে। এ ছাড়া চলতি বছর বাড়ি ভাড়াও দ্বিগুণ হয়েছে। হজ এজেন্ট-সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি আরবে কম মূল্যের (৭২০ রিয়াল) মুয়াল্লিম সার্ভিসের কোটা শেষ হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অন্তত ৯০টি এজেন্সির প্রায় ৩ হাজার হজযাত্রীর জন্য মুয়াল্লিম চুক্তি করা নিয়ে বিপাকে পড়ে এজেন্সি কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী এক এজেন্সি মালিক আবদুর রহমান বলেন, সর্বনিম্ন মূল্যের মুয়াল্লিম সার্ভিসের জন্য ৭২০ রিয়াল খরচ হওয়ার কথা। বর্তমানে ১ হাজার ৫০০ রিয়ালের নিচে কোনো মুয়াল্লিম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হজের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে হাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল বাহার বলেন, হজে যেতে যে বাড়তি ২ হাজার রিয়াল লাগবে, তা আগে জানা থাকলে সে অনুযায়ী হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হতো। এখন সমাধান কী— এমন প্রশ্নে হাব সম্পাদক সাধারণ এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি, তারা যেন বিজ্ঞপ্তি জারি করে সবাইকে জানিয়ে দেয় যে এই টাকা যাত্রীকে বহন করতে হবে।’ ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনো এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘২ হাজার রিয়ালের বিষয়ে সিদ্ধান্তটি সৌদি কর্তৃপক্ষ আগে আমাদের জানায়নি। ফলে আমাদের কাছে এটি স্পষ্ট নয়। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার জন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, বাড়তি টাকা কাকে দিতে হবে, তা খুব দ্রুত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।’ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ আরও বলেন, ‘ই-ভিসা জটিলতার কারণে অনেক হজযাত্রী এখনো পাসপোর্ট হাতে পাননি। ফলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আরও জেনেছি, কয়েক হাজার হজযাত্রীর ভিসাসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এজন্য তারা নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে পারছেন না। ফলে ফ্লাইটে দেখা দিয়েছে হজযাত্রী সংকট। এ কারণে ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা বাড়ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর