বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

দলীয় অপরাধীদের জন্য রেড অ্যালার্ট

রফিকুল ইসলাম রনি

দলীয় অপরাধীদের জন্য রেড অ্যালার্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলীয় অপরাধীদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হীনকাজে জড়িত এবং খুন-গুম-ধর্ষণের মতো অভিযোগ উঠছে তাত্ক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গুরুতর অভিযোগে এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত এক মাসে একজন এমপিসহ এক শীর্ষ নেতার ছেলে ও জেলার নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে পাশাপাশি ‘অপকর্মকারীদের’ পক্ষে তদবির না করতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও এমপিসহ মহানগর, জেলা-উপজেলা নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতারা জানান, কোনো নেতা-কর্মীর ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার দল আর নেবে না। যেসব এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দলীয় স্বার্থ পরিপন্থী কাজের অভিযোগ উঠছে তাদেরকে ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে। মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সরকার ও দলের সব অর্জন এবং সাফল্য ম্লান হচ্ছে বলে মনে করেন দলীয় হাইকমান্ড। হাইকমান্ডের মতে, বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করতেই দলের কিছু নেতা-কর্মী এসব অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। এদের বেশির ভাগই দলের ভিতর ‘হাইব্রিড’ হিসেবে পরিচিত। তারা জানান, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এমন কঠোর মনোভাব থাকবে আওয়ামী লীগে। দল ও সরকারের ভাবমূর্তি যারা নষ্ট করবেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জানা গেছে, এর মধ্যে বিতর্কিত ১২-১৫ জন এমপিকে ঢাকায় ডেকে সতর্ক করেছেন দলের হাইকমান্ড। এ এমপিদের মধ্যে একজন মন্ত্রীও আছেন। তিনি ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের তৃণমূলে যোগাযোগ বাড়ানো এবং কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে তৃণমূল সুসংগঠিত, কোন্দলের অবসান এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন না করতে পারলে আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগির দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হবে। এ জন্য অন্যায়-অনিয়ম, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আগাম হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দলের ইমেজ ক্ষুণ্নকারী, অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দলীয় এমপিদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারকরা। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে মামলা করা বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ছাত্রী পেটানোর দায়ে বহিষ্কার করা হয় সিরাজগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনকে। গত বরিবার বগুড়ায় এক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং সে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করার অপরাধে বহিষ্কার ও গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার নিয়ে গণমাধ্যমে বেফাঁস বক্তব্য দেওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাভারের এমপি ডা. এনামুর রহমানকে। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদ রহমানকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিস করা হয়েছে। এর আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুকে।

দলীয় সূত্রমতে, আট বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের কিছু নেতা-কর্মীরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হওয়ায় দলের অভ্যন্তরীণসহ নানা অপকর্ম শুরু করেছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। কোথায় খুনের ঘটনাও ঘটছে। আবার বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে এনে ছাত্রী ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে একাধিক সরকারি সংস্থা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর