বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনবল সংকটে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

জনবল সংকটে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

দুপুর ১টা। সকাল থেকে চলছে ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি। রোগ তো আর বৃষ্টি মানে না। তাই কেউ রেইনকোট, কেউ ছাতা মাথায় আবার কেউ গামছা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ কাউন্টারে। প্রায় ৪০০ মানুষের হৈ হল্লায় সরগরম হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। শুধু বহির্বিভাগ নয়, রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকের কক্ষের সামনের আয়া, প্যাথলজি কাউন্টারের কর্মচারী এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা কাউন্টারের কর্মীরা। সেবার মান ভালো হওয়ায় রোগীর চাপ অনেক বেশি এই হাসপাতালে। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের জনবল দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক রোগীর সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ পর্যন্ত রোগী সেবা নিতে আসে এই হাসপাতালে। মাত্র ১০ টাকার টিকিটে এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন মানুষ। এ ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী এবং দরিদ্র মানুষের ডাক্তার দেখানো থেকে প্যাথলজিতে ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এরপরও যদি কারো সামর্থ্য না থাকে তা হলে বিনামূল্যে সেবা এবং ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে প্রায় ৪০০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

ঢাকা সেনানিবাসের এমইএস এলাকায় আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের পাশে কাচ দিয়ে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন ভবনটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ৫০০ শয্যার ১২ তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা ১৪৫ জন এর মধ্যে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর নার্স রয়েছেন ১৭০ জন। এর মধ্যে প্রতিদিন কর্মরত থাকেন ১৫০ জন। অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জামে সুসজ্জিত হাসপাতালে শুরুর দিকে রোগী তেমন একটা আসত না। বনানী-এয়ারপোর্ট হাইওয়ের পাশে এই হাসপাতাল সম্পর্কে না জানায় রোগীর খোঁজে নামেন হাসপাতালের কর্মীরা। ছড়ানো হয় লিফলেট, বিভিন্ন এলাকায় করা হয় মাইকিং। এরপর বদলে যেতে থাকে চিত্র। দালালের দৌরাত্ম্য না থাকায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় ভালো সেবার মানে রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করে হাসপাতালে। বর্তমানে রোগীর ভিড় সামলে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কারণ রোগীর ভিড় বাড়লেও বাড়েনি জনবল। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা গাজীপুরের ছানোয়ার আলী বলেন, আগে ঢাকার অন্য হাসপাতালে সেবা নিতে গেলে ডাক্তার নেই, মেশিন নষ্ট এসব রোজই শুনতে হতো। এরপর আমার এক আত্মীয়র সঙ্গে এই হাসপাতালে আসি। এখানে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডাক্তার দেখানো, টেস্ট করানো যায়। আবার ডাক্তারের দেওয়া ওষুধের বেশিরভাগই এখান থেকে দেয়। আগে এলে অনেক দ্রুত ডাক্তার দেখাতে পারতাম কিন্তু এখন ভিড় বেশি হওয়ায় দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শহিদুল গণি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেবার মান ঠিক রাখতে আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করি। কিন্তু এতো রোগীকে এই জনবল দিয়ে ভালো সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। খুব দ্রুত চিকিৎসক, নার্স, প্যাথলজিস্ট, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ না দিলে হাসপাতালের সেবা এবং পরিবেশ বজায় রাখতে সমস্যায় পড়তে হবে।

সর্বশেষ খবর