শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুক্তামণির হাত কেটে হলেও অস্ত্রোপচার করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তামণির হাত কেটে হলেও অস্ত্রোপচার  করতে হবে

রক্তনালির বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির ডান হাতটা অক্ষত রেখেই অস্ত্রোপচার করার চেষ্টা করবেন চিকিৎসকরা। তবে তা সম্ভব না হলে হাত কেটে হলেও অস্ত্রোপচার করতে হবে। কেননা, অস্ত্রোপচার না করলে তার মৃত্যুঝুঁকি আছে। মুক্তামণির বাবা-মা মেয়ের জীবন বাঁচাতে হাত কেটে ফেলতে হলেও অস্ত্রোপচারে সম্মতি দিয়েছেন।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুক্তামণির বায়োপসি করা হবে আগামীকাল। হাত থেকে ঠিক কতটুকু জায়গা কাটতে হবে, তা বায়োপসি করার সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগে থেকে কিছুই বলা সম্ভব নয়। বায়োপসির ফলাফল থেকে জানা যেতে পারে তার বিরল রোগের নাম। সাতক্ষীরায় জন্মের দেড় বছর পর মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যার শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে মুক্তামণির ডান হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। মুক্তামণি বিছানাবন্দী হয়ে পড়ে। এখন তার বয়স ১০ বা ১২ বছর। মুক্তামণির রোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। বিনামূল্যে তার চিকিৎসা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসা সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে করা সম্ভব কিনা, তা দেখার নির্দেশ দেন। তারপর বার্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণিকে সেখানকার চিকিৎসকদের দেখানো হয়। তার সব প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে সেখান থেকে মুক্তামণির অবস্থাকে ‘ডিফিকাল্ট কেস’ বলে ই-মেইলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, মুক্তামণির হাত কেটে ফেলতে হতে পারে। আর এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে মুক্তামণির অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে না, বিভিন্ন ডায়াগনোসিস করে দেখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানানোর পর তিনি বার্ন ইউনিটেই মুক্তামণির চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, এ ধরনের বিরল রোগের চিকিৎসার অনেক স্তর থাকে। মুক্তামণি প্রথম যখন আসে, তখন তার হাত থেকে বের হওয়া গন্ধে কেউ টিকতে পারত না। এখন কিন্তু গন্ধ বের হয় না। তার একটা অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা শেষ করা যাবে না। কমপক্ষে ৬-৭টি অস্ত্রোপচার লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক চিকিৎসক জুলফিকার লেনিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তামণির চিকিৎসা চলছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সক্ষমতা বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা না পারলেও এখানকার চিকিৎসকরা সফল হবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তামণির মা আসমা খাতুন বলেন, ‘এখানকার চিকিৎসায় আমরা খুব সন্তুষ্ট। বাড়িতে থাকলে মেয়ে এত ভালো থাকত না। আমি আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’ সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদি দোকানি ইবরাহিম হোসেনের দুই মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। তারা যমজ দুই বোন। হীরামণি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও মুক্তামণি বিরল রোগে আক্রান্ত। হীরামণি এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। মুক্তামণি স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনেছিল, কিন্তু তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর