শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের মধ্যে গতকাল অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছয় শিক্ষার্থী। রেজিস্ট্রারসহ শিক্ষক লাঞ্ছিত করার সঙ্গে জড়িতরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানান। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের কারণ অনুসন্ধান ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তদন্ত কমিটি গতকাল কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ থাকেনি। গতকালও মহাখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। আইন বিভাগের কামরুন নাহার, আশিক ইশতিয়াক, শেখ নোমান পারভেজ, সাদিয়া আফরিন, ম্যাথমেটিকস ও ন্যাচারাল সায়েন্সেস বিভাগের আকাশ আহমেদ ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ইয়াসিনুর রহমান রনি গতকাল বেলা ১১টায় অনশন শুরু করেছেন। তারা ‘বিচারের দাবিতে অনশন, তবুও চুপ প্রশাসন’, ‘বোনের গায়ে হাত কেন? বিচার চাই, জবাব চাই’, ‘অনশন অনশন, বিচার চাই, বিচার চাই’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধ ও বৃহস্পতিবারের সব ক্লাস বাতিল ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, গতকাল কোনো বিভাগের পরীক্ষা হয়নি। রবিবার থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (স্কুল অব ল) বিভাগের শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে এক বছরের চুক্তিতে গত বছর নিয়োগ দেওয়া হয়। চুক্তি শেষ হওয়ার পর তিনি আইডি কার্ড আনতে গেলে রবিবার রেজিস্ট্রার ও দুই সহকারী রেজিস্ট্রারের হাতে লাঞ্ছিত হন। এই শিক্ষকের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় ধস্তাধস্তিতে ফারহান উদ্দিনের পোশাকও ছিঁড়ে যায়। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ফুঁসে ওঠেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রেজিস্ট্রার শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহিউদ্দিন ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলের পদত্যাগ দাবিতে রবিবার থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে তাদের বের করে দেন কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী। এ সময় প্রহরীরা এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তা প্রহরীদের আপত্তিকর কর্মকাণ্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থাকলেও তদন্ত কমিটির এজেন্ডায় এ বিষয়টি উল্লেখ নেই। আমরা চাই এ বিষয়েও তদন্ত হোক।’ উদ্ভূত সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলেও গতকাল কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম ইউসূফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাজদিন হাসান রয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি হিসেবে মাইমুনা সৈয়দ আহমেদকে সদস্য রাখা হয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়ে সমস্যার সমাধানে আসতে চাইছি। তদন্ত কমিটি দোষীদের বিরুদ্ধে সুপারিশ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর