শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

থামানো যাচ্ছে না শেয়ার সিন্ডিকেটের কারসাজি

আলী রিয়াজ

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্রোকার হাউস মালিক, কোম্পানির পরিচালক ও বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামছে না। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কিছুই করতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল, জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দর বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে দিন দিন শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। সরগরম হয়ে উঠেছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন  (বিএসইসি) ১১ ধরনের কারসাজি চিহ্নিত করে গত জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ওই পদক্ষেপের পরও একই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ শেয়ার ছিল। এসব শেয়ার সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে নিজেরা বিক্রি করে দিয়েছে। দেখা গেছে, বর্তমানে ওই সব কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। কোম্পানিগুলোর এমন তথ্য দেখে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা অনেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা কোনো ঘোষণা না দিয়েই বাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এর ফলে শেয়ারের দর অনেক কমে যায়। টানা দর বৃদ্ধি করে শেয়ার বিক্রি করে এই সিন্ডিকেট চক্র শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। বিএসইসি গত সপ্তাহে চারটি কোম্পানি পরিচালকের কারসাজির প্রমাণ পেয়ে জরিমানা করেছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করার জন্য কমিটিও গঠন করেছে। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে— বেঙ্গল ফাইন সিরামিক, রিপাবলিক ইনসু্যুরেন্স, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, ফু ওয়াং ফুড, সলভো কেমিক্যাল। কোম্পানিগুলোর বাজার লেনদেনে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪০ শতাংশ দর বেড়েছে। কিন্তু শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কোম্পানিগুলো। বিএসইসি গত জানুয়ারি মাসে শেয়ার কারসাজির কয়েকটি পদ্ধতি খুঁজে পায়। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করেই শেয়ার কারসাজি চলছে। এগুলো হলো— স্বয়ংক্রিয় গ্রাহক (অটো ক্লায়েন্ট), শেয়ার না থাকার পরও বিক্রি (শর্টসেল), সামনে চলমান গ্রাহক (ফ্রন্ট রানিং ক্লায়েন্ট), চক্রাকার লেনদেন (সার্কুলার মুভমেন্ট), প্রতারণা (স্পুফিং), লেনদেন একাগ্রতা (ট্রেড কনসেনট্রেশন), বিজ্ঞপ্তি সতর্কতা (প্রেস রিলিজ ওয়ার্নিং), সুবিধাভোগী প্রকৃত গ্রাহক (ইনসাইডার টার্নওভার নেট ক্লায়েন্ট), সর্বশেষ অবস্থান সূচক (মার্কিং দ্য ক্লোজ), সর্বশেষ মূল্য (ক্লোজিং প্রাইজ) কারসাজি ও আদেশের বিস্তার (অর্ডার স্প্রেড)। এর বেশ কয়েকটি অভিনব বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে অটো ক্লায়েন্ট কারসাজিতে একই ব্যক্তিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা হিসেবে পাওয়া যায়। একাধিক বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব খুলে নিজের মধ্যেই লেনদেন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে থাকে। ফ্রন্ট রানিং ক্লায়েন্ট কারসাজিতে বড় শেয়ার কেনায় সংবাদ আগে কেউ পেয়ে শেয়ার কিনে দর বাড়ানো। স্পুফিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থায় শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে লেনদেন যন্ত্রে বিপরীতমুখী কিছু আদেশ দিয়ে দামকে প্রভাবিত করা হয়।  বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় কারসাজি বা অনিয়মের ঘটনা বেড়ে যেতে পারে সন্দেহে বিএসইসি বাজার-সংশ্লিষ্টদের এসব কারসাজির বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। বিএসইসির চিহ্নিতকরণের পরও একইভাবে চলছে কারসাজির ঘটনা। জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভালো শেয়ারের দর বেড়ে না বেড়ে জাঙ্ক জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দর বেশি বাড়ছে। ৩-৪ দিন এসব শেয়ারের দর বাড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। এটা অবশ্যই কারসাজি। এখন বিএসইসির উচিত জাঙ্ক শেয়ারে মার্জিক ঋণে কড়াকড়ি আরোপ করা। একই সঙ্গে যাদের লাখ লাখ শেয়ার আছে সেগুলো বিক্রির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ। এ ছাড়া সবসময় কঠোর নজরদারি রাখতে হবে বাজারের ওপর। বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর