রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে এমপিপুত্রের সন্ত্রাসীদের মহড়ায় আওয়ামী লীগই আতঙ্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপগঞ্জে এমপিপুত্রের সন্ত্রাসীদের মহড়ায় আওয়ামী লীগই আতঙ্কে

রূপগঞ্জে দিনদুপুরে মহড়া

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিন ধরে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে ধারালো অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর বড় ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পার মদদে সন্ত্রাসীরা এ মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগেরই ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন চলছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করতেই এমপিপুত্রের মদদে এ সশস্ত্র মহড়া দেওয়া হচ্ছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বলছেন, ওই মহড়ার কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেকেই শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করতে ভয় পাচ্ছে। এমপিপুত্র লালিত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়ার পাশাপাশি হামলা, নাশকতাসহ যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানালেও গতকাল পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী প্রভাব খাটিয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। নিজের পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে বালু মহাল, মিল কারখানা, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা ক্ষেত্রে আধিপত্য ধরে রেখেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এমপির ওপর ক্ষুব্ধ। নেতা-কর্মীরা জানান, বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শাহজাহান ভুইয়ার নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট মুশুরী এলাকার সফুরা কমিউনিটি সেন্টারে প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভায় সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিকসহ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওই সভার দুই দিন আগে থেকেই এমপির বড় ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পার মদদে সন্ত্রাসীরা সভাস্থল এলাকায় মোটরসাইকেল ও সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আয়োজিত সভা ভণ্ডুল করতে পাল্টা সভার ঘোষণা দেয় তারা। এ নিয়ে প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপর থেকেই পাপ্পার নির্দেশে তার ক্যাডার কামরুজ্জামান হিরার নেতৃত্বে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্রের ভয় দেখানো হচ্ছে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের। এতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালন করতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় আছেন। এদিকে বালু মহাল, মিল কারখানা, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন আধিপত্য নিয়ে কামরুজ্জামান হিরা ও নাফিজ গ্রুপের মাঝে প্রায়ই সশস্ত্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে এমপি ও এমপিপুত্রের কাছ থেকে সাধারণ জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, হাটাব আতলাশপুর এলাকায় এক কাঙ্গালিভোজ অনুষ্ঠানে এনডিই রেডিমিক্স নামের একটি কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কামরুজ্জামান হিরার নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নাফিজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে। সন্ত্রাসীদের ককটেল বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তখন কাঙ্গালিভোজে আসা লোকজন ছোটাছুটি করে চলে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শাহজাহান ভুইয়া বলেন, এমপিপুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পা রূপগঞ্জে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করতেই তার বাহিনী দিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। আর এই সন্ত্রাসীদের কারণে আওয়ামী লীগের বদনাম হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বাশার টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে, সেখানেও বাধা দিচ্ছে এমপি ও তার ছেলে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে ভেবে দেখা উচিত। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘এমপির কারণে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে মদদ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তা না হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?’ কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি। এ জন্যই দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সশস্ত্র মহড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

সর্বশেষ খবর