শিরোনাম
সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়িয়েছে মংলা বন্দর

রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ সংকট নিরসনে ২৩টি প্রস্তাবনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ঘুরে দাঁড়িয়েছে মংলা বন্দর

পাঁচ বছরের ব্যবধানে মংলা বন্দরের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি বেড়েছে বন্দরে বিদেশি জাহাজ আগমন ও কার্গো হ্যান্ডলিং (পণ্যের ওঠানামা)। তবে একই সময়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে কনটেইনার আগমনের সংখ্যা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, জেটিতে নাব্য সংকট, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও কাস্টমস জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে এখানে আমদানি-রপ্তানি বহুগুণ বাড়বে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বন্দরে বিদেশি জাহাজ এসেছিল  ২৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৩টি। একই সঙ্গে বন্দরে রাজস্ব আয় বেড়েছে ২২৬ কোটি টাকা। জানা যায়, একসময়কার স্থবির হয়ে পড়া মংলা বন্দরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয় বাদে নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭১ কোটি টাকা।  মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে আশার সঞ্চার করেছে মংলা বন্দর। তারপরও কিছু সংকট পিছু ছাড়ছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মংলা বন্দরে কনটেইনার আনার খরচ বেশি পড়ে। পশুর চ্যানেলে ডুবন্ত রেক ও নাব্য সংকটের কারণে অনেক জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ ছাড়া পর্যাপ্ত খালি কনটেইনারেরও সংকট রয়েছে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নানা সংকটে এক বছরের ব্যবধানে বন্দরে কনটেইনার আগমনের সংখ্যা কমেছে কয়েকগুণ। বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২০ হাজার ৭১৭টি কনটেইনার আমদানি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪০ কনটেইনার। এদিকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বন্দরে আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যবহৃত হয় ৪১ হাজার ৯৫৩টি কনটেইনার। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৯৫২টিতে। আগের বছরের তুলনায় বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের হার কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অযৌক্তিক শুল্কায়ন ও কায়িক পরীক্ষার নামে সময়ক্ষেপণে মংলা বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য খালাসে স্থবিরতা রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে আমদানি পণ্যের ১০ শতাংশ কায়িক পরীক্ষা করা হলেও মংলা কাস্টম হাউসে চালানের ১০০ শতাংশ পণ্যের কায়িক পরীক্ষার নামে হয়রানি করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে শিল্পের ‘ক্যাপিটাল মেশিনারিজ’ আনতে চান না। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশ ‘ত্বরিত খালাস পদ্ধতি’ এখানে প্রায় অমান্য করা হয়। তিনি বলেন, আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির কারণে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।  তবে বন্দর ঘিরে এসব সংকট নিরসনে গত ৫ আগস্ট বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভায় নতুন ২৩টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বন্দরের নিরাপত্তা, মংলা কাস্টমস হাউসের অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, আকরাম পয়েন্টে গভীর নোঙর, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্য বজায় রাখতে ড্রেজিং অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৬ জুলাই ড্রেজিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে মংলা বন্দর জেটি হতে রামপাল পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিংয়ের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ড্রেজিং চলবে। জিটুজি এর আওতায় চায়নার অর্থায়নে বন্দরে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ, পশুর চ্যানেলে ডুবন্ত রেক অপসারণ ও জেটির নিচে জমে থাকা পলি ভেঙে পড়া রোধ করতে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।  বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সংকটের সমাধান করা গেলে মংলা বন্দরের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। সেই সঙ্গে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে ও অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর