সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হ্যাকার ধরার পরামর্শ ফিলিপাইনের

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতে সম্ভাবনা কম

মানিক মুনতাসির

রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরতের চেয়ে হ্যাকারদের ধরতে মনোযোগী হতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিল ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে পারলেই অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হবে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে বাংলাদেশের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার ফেরত এসেছে। বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার কোথায়, তার হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।

চুরির অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনাও কম। উদ্ধারের সম্ভাবনা জাগাতে হলে অবশ্যই হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) দায়ী কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রীকে প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনের কপি আবারও চেয়েছে ফিলিপাইন। বাংলাদেশ আগের মতোই অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, এটা নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, আরসিবিসি এবং ফেডারেল রিজার্ভের দায় আছে কিনা, সে বিষয়েও তথ্য রয়েছে। কিন্তু সেটা ফিলিপাইনকে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিংবিষয়ক একাধিক সংস্থা কাজ করছে। এমনকি ইন্টারপোল, ফিলিপাইনের একাধিক আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা নিয়োজিত। ফলে তাদের কাছেও যথেষ্ট তথ্য রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের আদালতে মামলাও চলছে। যে কারণে বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুুহিত। অবশ্য এর আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে একাধিকবার বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে কিছু অর্থ আসার যে সম্ভাবনা জেগেছিল গত মসে সে প্রক্রিয়ায় আবারও ভাটা পড়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, আরও ১২ লাখ ডলার বাংলাদেশ শিগগিরই পাবে। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে দেশটি জানিয়েছে, ওই প্রক্রিয়া অনিশ্চিত। এ ছাড়া দেশটির সোলায়ের ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে জব্দ করা অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারেও নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিলম্বে হলেও খোয়া যাওয়া অর্থের পুরোটাই ফেরত পাওয়া যাবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা উঠেছে তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা বা কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রিজার্ভ চুরির প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১২০ কোটি টাকা ফেরত এসেছে। বাকি অর্থ কোথায় গেছে তার হদিস এখনো মেলেনি। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয় হ্যাকার চক্র। বহু তদন্ত ও শুনানির পর গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফেরতের নির্দেশ দেয় ফিলিপাইনের একটি আদালত। তার প্রায় এক মাস পর ওই অর্থ ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রাসাদ দেবনাথ বলেন, ‘ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিছু বিষয়ে অগ্রগতি অবশ্যই রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে সহায়তা দিচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ অর্থ ফেরত পাবে।’

সর্বশেষ খবর