সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রিমান্ড শেষে তুফান রুমকি কারাগারে

রুমকির রাজনৈতিক পরিচয় অস্বীকার প্রধান দুই দলের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ছাত্রী ধর্ষণ ও পরে ওই ছাত্রী এবং তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলায় তুফান সরকার ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল তাদের ফের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতের বিচারক শ্যামসুন্দর রায় শুনানি শেষে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। এদিকে রুমকির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও রুমকিকে রাজনৈতিকভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। তুফান সরকারের ভাই মতিন সরকার গা-ঢাকা দিয়েই আছে। পুলিশ তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, তুফান সরকারকে তিন দফায় ৯ দিন ও কাউন্সিলর রুমকির দুই দফায় ছয় দিন রিমান্ড শেষ হলে গতকাল আদালতে নিয়ে ফের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত। এদিকে বগুড়ায় কথা উঠেছে রুমকির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে। রুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই মুখ খুলছে না। জেলা প্রশাসক রুমকির বিষয়ে তদন্ত কমিটি করলেও পৌর মেয়র এ ব্যাপারে চুপচাপ। শহরবাসী চাইছেন রুমকির কাউন্সিলর পদ বাতিল এবং সে যে দলেরই হোক দল থেকে তার বহিষ্কার। নয় তো ভবিষ্যতে জামিনে মুক্ত হলে আবারও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করবে সে। জানা যায়, বিগত পৌর নির্বাচনে মার্জিয়া হাসান রুমকি পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। বিএনপি থেকে ভোটে দাঁড়ালেও ওই নির্বাচনে শ্রমিক লীগ, যুবলীগের প্রভাবশালী কয়েকজন তার পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচিত হওয়ার বেশ কিছুদিন পর রুমকি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের হাতে ফুল দিয়ে নিজেই আওয়ামী লীগে যোগদান দিয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায়। ওই সময় রুমকিকে দলে নেওয়া বা না নেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলেনি আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি কিশোরী ধর্ষণ, নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় রুমকির সম্পৃক্ততা উঠে আসে। আলোচিত হয় গণমাধ্যমে। ওই ঘটনায় তাত্ক্ষণিকভাবে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার ও যুবলীগ নেতা মতিনকে বহিষ্কার করা হলেও রুমকির বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তার দল।

রুমকির দলীয় পরিচয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই ‘না’ বলছে। বিএনপি বলছে, ‘মমতাজ উদ্দিনকে ফুল দিয়ে রুমকি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এখন আমাদের সঙ্গে নেই সে। শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের প্রভাবশালী কিছু নেতার সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক চলাফেরা। তাই রুমকির দায়ভার বিএনপি নেবে না।’ আওয়ামী লীগ বলছে, ‘আওয়ামী লীগ এমনই দল যে ফুল দিলেই কেউ দলে যোগ দিতে পারে না। অনেকগুলো নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে দলে আসতে হয়। রুমকি আওয়ামী লীগের কোনো ইউনিটেরই সদস্য না।’

মার্জিয়া হাসান রুমকি জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসন তার সম্পৃক্ততা আছে কি না এ নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে। রুমকির বিষয়ে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ৩ আগস্ট থেকে গণশুনানিও শুরু করেছে ওই কমিটি। বগুড়ার পৌর মেয়র এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সভা ডেকে এখনো কোনো সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাননি। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মার্জিয়া হাসান রুমকি বিএনপির কোনো পর্যায়ের সদস্য না। রাজনৈতিকভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির সঙ্গে তাকে জড়ানো হচ্ছে। পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছি, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমনই দল যে ফুল দিলেই কেউ দলে যোগ দিতে পারে না। অনেকগুলো নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে দলে আসতে হয়। রুমকি আওয়ামী লীগের কোনো ইউনিটেরই সদস্য না।’

১৭ জুলাই কলেজে ভর্তি করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। এ ঘটনার পর ২৮ জুলাই দুপুরে ওই এলাকার পৌর কাউন্সিলর রুমকি ও তার সহযোগীরা বিচারের নামে ওই ছাত্রী এবং তার মাকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে তুফান সরকার ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় ওই কিশোরীর মা মুন্নি বেগম বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা সরকার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি ও তার মা রুমি, মাথা মুণ্ডনকারী নাপিত জীবন রবিদাসসহ নয়জনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে জেলহাজতে তাদের প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে তুফানের সহযোগী আতিক ও মুন্না আদালতে ১৬৪ ধারায় ওই ছাত্রী ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। নাপিত জীবন রবিদাসও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর