জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের সামনে বসেছে ৩০টি স্টল। পাটের তৈরি নানা রকম পণ্যসামগ্রীতে ভরা। কী নেই সেখানে? সোনালি আঁশ দিয়ে তৈরি কাপড়, ব্যাগ, শোপিস, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাটসহ পাওয়া যাচ্ছে গৃহস্থালির নানা ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রয়েছে হ্যামক, ক্যাপ, পর্দা, লাইফটাইম ক্যালেন্ডার, ল্যাম্প শেডসহ পাট দিয়ে তৈরি কিছু দুষ্পাপ্য জিনিসপত্র। বাঙালি ফ্যাশনে বৈচিত্র্য আনতে দিন দিন বাড়ছে এসব পাটজাত পণ্যের চাহিদা। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী পণ্য বলেই ক্রেতাদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে এসব পণ্যসামগ্রী। পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতেই ‘পাটশালা’ এর উদ্যোগে ৫ আগস্ট শুরু হয় এই পাটমেলা। এতে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ রকমের পাটের তৈরি পণ্য এবং নানা রকমের হস্তশিল্প।
এসব পণ্যের দামও রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। বাহারি ডিজাইনের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। জুতার দাম রাখা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া মেয়েদের জন্য কম দামের গয়না, শোপিস দোলনা পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা দেখতে ও পণ্য ক্রয় করতে বিদেশি বায়ারদেরও সমাগম ঘটছে এখানে। এতে উৎসাহ বাড়ছে পাট চাষি, বিক্রেতা, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার। মেলায় ঘুরতে আসা শাহনাজ সিদ্দিকী বলেন, ছোটবেলা থেকেই পাটের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে আসছি। মেলার স্টলগুলো ঘুরে পছন্দের জিনিসগুলো সংগ্রহ করেছি। এ ধরনের মেলা দেশীয় পণ্য ব্যবহারে আগ্রহ সৃষ্টি করবে। ‘কুমিল্লা বুটিক’ নামের একটি স্টলের বিক্রয়কর্মী মো. মুমিন দেওয়ান বলেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পাটের তৈরি আমাদের নিজস্ব আকর্ষণীয় পণ্যসামগ্রী স্টলে রাখা হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও বিক্রি খারাপও হয়নি। আশা করি শেষ দিন ক্রেতা-দর্শকদের ভিড় আরও বাড়বে। এদিকে মেলার প্রবেশ মুখেই ‘পাটের ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক একটি প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন চিত্রশিল্পী পাটের ক্যানভাসে এই প্রতিকৃতিটি অঙ্কন করেছেন। মেলার আয়োজক এবং ‘পাটশালার’ প্রধান নির্বাহী চাষী মামুন বলেন, চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান পাটের চটে ছবি আঁকতেন। কিন্তু আমাদের চারুশিল্পীরা ইন্ডিয়া বা চীনের তৈরি ক্যানভাস ব্যবহার করেন। অথচ পাটের তৈরি অনেক ভালো ক্যানভাস আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে। তাই শিল্পীদের মধ্যে পাটজাত ক্যানভাস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি এখানে রাখা হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটি উপহার হিসেবে হস্তান্তর করতে চাই। চার দিনব্যাপী এই পাটমেলা শেষ হবে আজ মঙ্গলবার। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে মেলা। বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী।