বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল

দখলে ভরাটে হারিয়েছে নাব্যতা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল

দখল দূষণের কবলে চাক্তাই খাল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দখল দূষণের কবলে পড়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চাক্তাই খাল। দেশের অন্যতম পাইকার বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের এক সময়ের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত এ খালের বাঁকে বাঁকে রয়েছে অবৈধ দখলদার। খাল দখলের প্রতিযোগিতায় গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন, গার্মেন্ট কারখানা থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বস্তি। প্রায় প্রতিটা পয়েন্টে অবৈধ দখলদাররা পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করায় সামান্য বৃষ্টিতে নগরে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। ফলে এক সময়ের চট্টগ্রামের এ ‘লাইফ লাইন’ পরিণত হয়েছে দুঃখে।

চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চাক্তাই খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব সংস্থার সমন্বয় করে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব।  খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসার এক সময়ের লাইফ লাইন চাক্তাই খাল। এ খালের যথাযথ ড্রেজিং না করায় সামান্য বৃষ্টিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর কিছু অংশ ডুবে যায়। চাক্তাই খালের ড্রেজিং করলেই নগরীর বেশ কিছু এলাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। একই সঙ্গে নৌ-বাণিজ্য ফের ফিরে আসবে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য একসময় চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে চাক্তাই খাল দিয়েই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন হতো। কিন্তু এখন তা সোনালি অতীত। দখলের কবলে পড়ে এ খাল কোথাও কোথাও পরিণত হয়েছে ছড়াতে। খালের চামড়া গুদাম এলাকায় প্রশস্ত কমে হয়েছে প্রায় অর্ধেক। এখানেই খালের ওপরই তৈরি করা হয়েছে তিনতলার একটি ভবন। মিয়াখান নগর এলাকার খালের চিত্র অভিন্ন। রাজাখালী এলাকায় খালের ওপর গড়ে উঠেছে গার্মেন্ট কারখানা ও আবাসিক ভবন। অনেক জায়গায় বর্জ্য জমে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। এতে করে নৌযান চলাচলের এক প্রকার অনুপযুক্ত হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এ খাল। এ ছাড়া দূষণের কবলে পড়ে খালের পানির রং হয়ে গেছে কালো। এতে ভাসছে পলিথিন ও আবর্জনা। ২০০৩-০৪ সালে কোনো সম্ভাব্যতা যাছাই ছাড়াই ৯ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রেখে খালের বেশির ভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়। দুই-তিন বছর পর পাহাড়ি বালু, আবর্জনা এবং বালুতে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। পরে তলদেশ ভরাট হয়ে গেলেও খালের তলদেশ থেকে মাটি ও বালু অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ‘সম্ভাব্যতা যাছাই ছাড়া চাক্তাই খালের তলা পাকাকরণ ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। খালের তলা পাকাকরণের ফলে খালের তলা ৫-৭ ফুট উঁচু হয়ে যায়। ফলে চাক্তাই খাল নিজের স্বকীয়তা হারায়।’

অর্ধশতাধিক দখলদার : চাক্তাই খালের অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালে ভূমি অফিসের সদর সার্কেলের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আছিয়া খাতুন সরেজমিনে পরিদর্শন করে দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকায় রয়েছেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। ওই তালিকা তৈরির পর দেড় বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। ওই তালিকায় অবৈধ ওই দখলদারদের তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্যরা হলেন— চাক্তাই খালের বাকলিয়া মৌজার বাম তীরে অবৈধ দখলদার হিসেবে রয়েছেন স্বপন চৌধুরী, সিরাজ মিয়া, নূর মোহাম্মদ, আলমগীর হোসেন, মাজহার আলী ইসলাম, মো. এয়াকুব খান, আনোয়ার হোসেন, আবুল কালাম, মো. রফিক। ডান তীরে অবৈধ দখলদার হিসেবে রয়েছেন শহিদুল আলম কাউন্সিলর, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল, আবদুল বারেক, জসিম উদ্দিন, আমেনুল হক, রেজওয়ানুল ইসলাম, বাহাদুর, ইউসুফ, সামছুল হক, মো. ইউসুফ, সামছুল হক, বশির আহমদ, আবদুস সালাম, নুরুল আমিন, সালেহ আহমদ অ্যান্ড সন্স, আবু মিয়া চৌধুরী, মো. মনির, আবু সুফিয়ান, আবু বকর চৌধুরী, এনামুল হক, মো. আলমগীর, আমীর হোসেন, নুরুল আমিন, জামাল আহমদ, নাছের, মনির আহমদ, আনোয়ার হোসেন, ফরিদ চেয়ারম্যান, ফরিদ সওদাগর, আক্তার সওদাগর, শফিউল আজম, বাবুল হাজী, মো. নাছের, আবুল কালাম, হাজী সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, হাজী সোবহান, হাজী নবী হোসেন সওদাগর, বাদশা মিয়া চৌধুরী, সালাউদ্দিন, টাইগার ফরিদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর