বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তথ্যপ্রযুক্তির ১২ পার্ক

রুহুল আমিন রাসেল

তথ্যপ্রযুক্তির ১২ পার্ক

তথ্যপ্রযুক্তি সব মানুষকে এক ছাতার নিচে এনেছে, যার সুফল ঘরে বসেই পাচ্ছেন কম-বেশি সবাই। আরও বেশি সুফল পেতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি এগিয়ে নিতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে দেশের ১২টি জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি—আইটি বা হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। এর সঙ্গে সাত জেলায় হচ্ছে ট্রেনিং সেন্টার। এগুলোর সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান হবে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর। এর সঙ্গে রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। জানা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং। এ খাতে বিশ্বের ৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২২তম। ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তাতে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়াবে পাঁচ শতাংশ। বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে সাড়ে চার লাখ মানুষ জড়িত। ভবিষ্যতে হাইটেক পার্ক রপ্তানি আয় বাড়াতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আউটসোর্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বিলিয়ন ডলারের যে স্বপ্ন দেখছেন, তাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ আয় বাড়াতে বিশ্ববাজারে যে ইতিবাচক ব্র্যান্ডি প্রয়োজন, তা বাংলাদেশের নেই। হাইটেক পার্কগুলোর সফল বাস্তবায়ন এ খাতে নীরব বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলেও মনে করেন তিনি। জানা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেওয়া সরকারের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হাইটেক  পার্কের বিনিয়োগকারীরা প্রণোদনা পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা প্রদানের তাগিদ দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হাইটেক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, বঙ্গবন্ধু রাজশাহী হাইটেক পার্ক (বরেন্দ্র সিলিকন সিটি) স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প, সিলেট ইলেকট্রনিকস সিটি, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণকাজ চলমান আছে। কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া দেশের সাত জেলায় শেখ কামাল ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১২ জেলায় আইটি বা হাইটেক পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এসব হাইটেক পার্কে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে ১১টি এসআরও জারি করা হয়েছে। ওই পত্রে আরও বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম প্রণোদনা প্রদান করছে। এসব দেশের তালিকায় ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড অগ্রগামী। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ওই সব দেশের চেয়ে বেশি সুবিধা বাংলাদেশে প্রদান না করা হলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিনিয়োগের উৎসাহ পাওয়া যাবে না। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগকারীদের অধিক সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেওয়া সুবিধার তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে। তা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ওই পত্রে। এর আগে ২৭ এপ্রিল দেশের ১২ জেলায় আইসিটি বা হাইটেক পার্ক স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নাটোর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও সিলেটে আইটি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ পরিদর্শনকালে ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান’ বাড়াতে প্রতিটি বিভাগে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে হাইটেক পার্ক স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। জানা গেছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান ১ শতাংশ। রপ্তানি আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সি-ফর্মের জটিলতায় এটি সরকারি হিসাবে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এ আয় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিং পেশাজীবীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছেন। এ ছাড়া দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্থানীয় বাজার প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট বাজার প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার। এটি দেশের জিডিপির প্রায় শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর