শিরোনাম
বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা প্রবাসীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুবাইপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম রুবেলকে (৩৫) নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন তার দূর সম্পর্কের স্বজনরা। রুবেলের সাড়ে ৩ লাখ টাকা ও কিছু সোনার অলঙ্কার আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয় এ হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে রুবেলের সন্ধান না পাওয়ায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডির তদন্তেই বেরিয়ে আসে অপহরণের পর খুনের চাঞ্চল্যকর রহস্য। পরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে  রুবেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার  করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত সন্দেহে মোজাম্মেল ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার ঝুমা এবং ঝুমার ভাই জাকিরুলকে আটক করা হয়। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় অতিরিক্ত উপ-কমিশনার  (এডিসি-মিডিয়া) ইউসুফ আলী, ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতেখারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। গতকালই আসামিদের আদালতে হাজির করে দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। অন্য আসামি জাকিরুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিলাল হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুবাই থেকে দেশে ফিরে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যান রুবেল। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। রুবেলের নিখোঁজের ঘটনায় ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করেন তার স্ত্রী পপি আক্তার। তদন্তে প্রযুক্তির সাহায্যে পূর্ব রামপুরার ২৪/১ নম্বর ঝুমার বাসায় রুবেলের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ। বাসার আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঝুমা বড় একটি ট্রাঙ্কসহ বাসার কিছু মালামাল ভাড়া করা ছোট একটি পিকআপ ভ্যানে করে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুতারপুরে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সূত্র ধরে ঝুমার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই বাড়ির পেছনে পরিত্যক্ত একটি জায়গা থেকে ২ আগস্ট রুবেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার ঝুমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে, তার স্বামী মোজাম্মেলকে সিলেট থেকে এবং ঝুমার ভাই জাকিরুলকে রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে রুবেলের স্ত্রীর সোনার একটি হার, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি জব্দ করা হয়। আর হত্যায় ব্যবহার করা বাসার বঁটি ও শিলপাটাও উদ্ধার করে পুলিশ। সুতারপুরের পাশের গ্রাম সুকদেবপুরে বাড়ি রুবেলের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, ঘটনার দিন দূর সম্পর্কের আত্মীয় ঝুমার ডাকে তার বাসায় যান রুবেল। সঙ্গে ছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সোনার অলঙ্কার। টাকা ও অলঙ্কার আত্মসাতের জন্য ওই বাসায় রুবেলকে আটক করেন ঝুমা ও মোজাম্মেল। একপর্যায়ে রুবেলের মাথায় শিলপাটা দিয়ে আঘাত করে জখম করা হয়। পরে বঁটি দিয়ে রুবেলের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঘটনার কিছু পরে ঝুমার স্বামী মোজাম্মেল রামপুরা বাজার থেকে বড় একটি ট্রাঙ্ক কিনে আনেন। রাতে বঁটি দিয়ে আবারও রুবেলের ঘাড় ও পা কেটে ভাঁজ করে তা ট্রাঙ্কের ভিতরে রাখা হয়। পরদিনই ট্রাঙ্কটি পিকআপ ভ্যানে করে নেত্রকোনায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং মোজাম্মেলের গ্রামের বাড়ির একটি খালি জায়গায় লাশ মাটিচাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়।

সর্বশেষ খবর