বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড়ে লড়াই হবে ত্রিমুখী

ফারুক তাহের, ফাতেমা জান্নাত মুমু ও জহুরুল আলম, তিন পার্বত্য জেলা থেকে

পাহাড়ে লড়াই হবে ত্রিমুখী

তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ এলাকার তিনটি সংসদীয় আসনে (২৯৮, ২৯৯ ও ৩০০) ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন। পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে প্রচারণা। বিগত রমজান ও ঈদুল ফিতরের মতো আগামী ঈদুল আজহা ঘিরেও প্রার্থীরা প্রচারণার কৌশল নিয়েছেন। অন্য ধর্মের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিন পার্বত্য অঞ্চলে বন্যা ও পাহাড়ধসের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতারা জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেন।

খাগড়াছড়ি-২৯৮ : এ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যত্রীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কংজ্যরি চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা ও অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সমিরন দেওয়ান এবং সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি সুলায়মান শেঠ, স্থানীয় নেতা নিরাপদ তালুকদার ও পূর্ণজুতি চাকমা। আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ-এর একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা হলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ও উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা। জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সংস্কারপন্থিদের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সুধাসিন্দু খীসা। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল দীর্ঘদিন ধরেই। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, কার্যত এ আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী।

রাঙামাটি-২৯৯ : এ আসনের বর্তমান এমপি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার। তিনি এ আসনে বেশ জনপ্রিয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে ঘটে নতুন মেরুকরণ। তার কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও যে কোনো মূল্যে রাঙামাটি আসনটি ধরে রাখতে চায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নড়বড়ে বসেছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ। দীপংকর তালুকদার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এ আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ এখন ব্যস্ত আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দীপংকর তালুকদার প্রতিটি উপজেলায় সফর ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে মাঠে আধাজল খেয়ে নেমেছেন। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন রাঙামাটির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফিরোজা বেগম চিনুও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান। তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তবে এ আসনে বিএনপি থেকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মণীষ দেওয়ান।

বান্দরবান-৩০০ : এ আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচ বারের নির্বাচিত এমপি বীর বাহাদুর উশৈ সিং। আগামী নির্বাচনেও তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। গত নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চংগ্যা স্বতন্ত্র নির্বাচন করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগের একাংশ। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি মা ম্যা চিং। তিনি নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শা চিন প্রু জেরীও মনোনয়ন চাইবেন। জেলা বিএনপির এই দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব কয়েক বছর ধরেই। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দুজনই দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কে এস মং ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) থেকে ছোটন কান্তি তঞ্চংগ্যা প্রার্থী হতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর