বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কালুরঘাট থেকে চাক্তাই সড়কবাঁধ

পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রাম

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কালুরঘাট থেকে চাক্তাই সড়কবাঁধ

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এভাবেই বদলে যাবে চট্টগ্রাম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কর্ণফুলীর তীরে ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কবাঁধ (সড়কসহ বেড়িবাঁধ) নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত এই সড়কবাঁধটি নির্মাণ হলে নগরীর একাংশের জলজট ও যানজট নিরসন হবে। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্ব চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আসবে আমূল পরিবর্তন। পাশাপাশি এ সড়ক প্রকল্পের কারণে দীর্ঘদিনের অবহেলিত এ এলাকা পর্যটন স্পটে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ, পরিপূর্ণ নকশা বা ডিটেইল ডিজাইন, ডিজিটাল সার্ভে, মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের জুন নাগাদ। এ প্রসঙ্গে চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর একাংশের লোকজন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। ঢাকা ও কক্সবাজারগামী যানবাহন নগরীতে প্রবেশ ছাড়াই এ সড়ক ব্যবহার করে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছবে। যানজট থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও উত্তর-পূর্ব চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানান চউক চেয়ারম্যান। চউক প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য ৬৯ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। নগরীর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটক (রেগুলেটর) ও পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে। ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ব্লক দিয়ে ঢালু প্রতিরোধ তীর সংরক্ষণ ও সড়ক নির্মাণের জন্য ৫৩ লাখ পাঁচ হাজার ঘনমিটার মাটি ভরাট করা হবে। নগরী জলাবদ্ধতামুক্ত করতে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত ১২টি খালের মুখে রেগুলেটরের মাধ্যমে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হবে। দৃষ্টিনন্দন এ সড়কের ১০টি স্পটে গড়ে তোলা হবে ১০টি অবজারভেশন টাওয়ার রেস্টুরেন্ট। যেখানে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা টাওয়ারের টপফ্লোরে উঠে উপভোগ করতে পারবেন চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, সিডিএ’র এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরী অনেকটা যানজটমুক্ত হবে। সড়কটি বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত প্রসারিত হলে এর সুফল আরও বিস্তৃত হতো। ১৯৬১ সালের মাস্টার প্ল্যানেও এ সড়ক ও বাঁধের কথা বলা হয়েছিল। প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, মাস্টার প্ল্যানে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেরিতে হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে নগরবাসী তথা চট্টগ্রামবাসী এ প্রকল্পের কারণে যানজট-জলজট নিরসনসহ অনেক সুবিধা উপভোগ করবে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধা চিহ্নিত করতে ২০০৬ সালে সমীক্ষা পরিচালনা করে জাপান ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি)। সমীক্ষায় দুটি রিং রোড ও ছয়টি শাখা রোড নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। ১৯৯৫ সালে প্রণীত নগর মহাপরিকল্পনায়ও কালুরঘাট সেতু থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এরই আলোকে চউক প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে। আর তা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী থেকে আসা যানবাহনগুলো নতুন এই সড়কবাঁধ ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা চলে যেতে পারবে। ফলে যানজটমুক্ত হবে আরাকান রোড, সিডিএ এভিনিউ ও শেখ মুজিব রোড। এছাড়া নগরীর আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট ও কোতোয়ালি এলাকার যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে কম সময়ে নগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে যেতে পারবে। একইভাবে শাহ আমানত সেতু হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জেলা ও উপজেলার যানবাহন কম সময়ে পূর্ব-পশ্চিমের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।

সর্বশেষ খবর