শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজশাহীর মাছ যাবে বিশ্ববাজারে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর মাছ যাবে বিশ্ববাজারে

রাজশাহী পুকুরে চাষ করা হচ্ছে সুস্বাদু মাছের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীর দুর্গাপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েনের আছে ২২টি পুকুর। এর কোনো কোনোটির আয়তন ৬০ বিঘা। তিনি বলেন, ‘পুকুরপাড়ে যেসব গাছ আছে তাতে আর্থিক সহযোগিতা হয় বেশ। সমন্বিত মাছ চাষে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। মাছ চাষ এখন অনেকের প্রধান আয়ের উৎস।’

শুধু গোলাম সাকলায়েন নন, তার মতো অনেকে এখন মাছ চাষ করে কোটিপতি। রাজশাহীতে মাছ চাষে ঘটেছে রুপালি বিপ্লব। মৎস্যঅধিদফতরের সহযোগিতায় কয়েক হাজার মত্স্যচাষি জেলার ৯টি উপজেলায় মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় এ খাতে প্রায় এক লাখ মানুষের হয়েছে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি রাজশাহীর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মাছ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে আরও বড় উদ্যোগ। রাজশাহীর মাছ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। নিরাপদ বিষমুক্ত মাছ চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ রাজশাহীর মাছ বিদেশের বাজারে স্থান করে নেবে। জেলা মৎস্যসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে বার্ষিক মাছের চাহিদা ৫৩ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন। মাছ উৎপাদন হয় ৬৬ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। ফলে উদ্বৃত্ত থাকে ১২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন। মোট জলাশয়ের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪২৭টি। এর মধ্যে সরকারি পুকুর ও দিঘি আছে ৪ হাজার ৯১৫টি। এ ছাড়া আছে ৩৬ হাজার ৯৬১টি পুকুর ও দিঘি। এ ছাড়া মাছ চাষ হয় ধানখেত, বিল ও নদীতে। মোট মত্স্যজীবীর সংখ্যা ১১ হাজার ৮৬৬ জন। আর মাছ চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলার মধ্যে পবার পারিলা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, তানোর এবং গোদাগাড়ীর বরেন্দ্র অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মাছ চাষ হচ্ছে। উৎপাদিত মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও জাপানি রুই। প্রতিদিন রাজশাহীর এসব উপজেলায় মাছ ধরছেন চাষিরা। এরপর বিশেষ পদ্ধতিতে জীবন্ত অবস্থায় তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। রাজশাহী জেলা মত্স্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পবা উপজেলার পারিলা এলাকার মৎস্যচাষি সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা এর আগে সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতাম। আমি প্রায় ২০ বছর ধরে মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু জেলা মৎস্যঅফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ১০ বছর ধরে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছি। কারণ নিরাপদ বিষমুক্ত মাছ চাষ করতে হলে সনাতন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ পুঠিয়া এলাকার মৎস্যচাষি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর মাছ চাষিরা এখন অনেক বেশি সংগঠিত। তারা একে অপরের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ফলে মাছ চাষিদের জ্ঞান বাড়ছে। পাশাপাশি রাজশাহীর মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত মাছ বিদেশে রপ্তানির জন্য চাষের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন আমরা এখন আর পুকুরে গোবর বা হাঁসের বিষ্ঠা দিচ্ছি না। কাপড়কাচা ও পুকুরে মানুষ বা গবাদিপশুর গোসল করা বন্ধ করেছি।’ জেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে রাজশাহীর মাছ রপ্তানির জন্য আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। ইতিমধ্যে লক্ষণীয় অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি প্রায় শেষের পর্যায়ে। রাজশাহীর মাছ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বাঙালি অধ্যুষিত দেশগুলোতে রপ্তানি করা হবে। আর রপ্তানির ক্ষেত্রে কার্প জাতীয় মাছ প্রাধান্য পাবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১০০ জন চাষিকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত মাছ চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ২০০ চাষিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাছ চাষিরা বিদেশে মাছ রপ্তানির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে গুড অ্যাকুয়ার কালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। এর ফলে রাসায়নিক বিষমুক্ত নিরাপদ মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। আমরা আশাবাদী, এ বছরের শেষ নাগাদ রাজশাহীর মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নেবে। এর ফলে রাজশাহীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে।’ সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘রাজশাহীতে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। আগের চেয়ে পুকুরের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত ১০ ভাগ। সমন্বিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। দাম ও চাহিদার কারণে এসব মাছের বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে ঢাকায়।’

সর্বশেষ খবর